ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবদানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ। নাগরিকদের নিত্য-নৈমিত্তিক জীবনযাত্রা সহজ করার ক্ষেত্রে সময় এবং অর্থ দুটোই রক্ষা করা যাচ্ছে প্রযুক্তির এই অসামান্য অগ্রগতিতে। প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন সেবার অবতারণার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে সেগুলোর মান। ক্রমাগত সহজলভ্য বৃদ্ধির সাথে যুগপৎ ভাবে বাড়ছে সেগুলোর চাহিদাও। মোবাইল ব্যাংকিং এর বিরামহীন প্রসারে গ্রাহকদের সাথে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত এবং বেসরকারি পরিষেবাগুলোর আর্থিক লেনদেনের মেলবন্ধন হয়ে যাচ্ছে আরো সহজতর। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত অনলাইনে বিদুৎ বিল পরিশোধের নিয়ম নিয়ে আলোচনা থাকছে আজকের ফিচারে।
অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ-এর নিয়ম
বিকাশ-এ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ
অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ-এর জন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ পেমেন্ট গেটওয়েটি। বিকাশ-এ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করলে সাথে সাথেই বিলের জমা রশিদটি সরাসরি মোবাইলে চলে আসে। এমনকি এর মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলে সর্বোচ্চ দুটি বিল পরিশোধ করা যায় কোন চার্জ ছাড়াই।
পড়ুন: পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
বিকাশের মাধ্যমে যে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রিপেইড ও পোস্টপেইড বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়া যাবে সেগুলো হলো- পল্লীবিদ্যুৎ, ডেসকো, নেসকো, ডিপিডিসি, বিপিডিবি, ওয়েস্ট জোন। এছাড়া এখানে বিলার হিসেবে বিপিডিবি সিলেট-এর প্রিপেইড পরিষেবাটিও সংযুক্ত আছে।
বিকাশ অ্যাপ না থাকলে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোডের পর ইন্স্টল করে নিতে হবে। অতঃপর বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার হিসেবে মোবাইল নাম্বার এবং পাঁচ অঙ্কের পিন নাম্বার দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এরপর থেকে প্রতিবার বিকাশ অ্যাপ ব্যবহারের সময় অ্যাকাউন্টের জায়গায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল নাম্বারটি বসে যাবে। শুধু পিন নাম্বারটি প্রবেশ করাতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, প্রতিবার বিকাশ অ্যাপ-এ প্রবেশের সময় মোবাইলের লোকেশনটি অন রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: কান পেতে রই: দেশের প্রথম মানসিক সহায়তা হেলপলাইন
এবার বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়া সময় নিম্নলিখিত পর্যায়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।
১/ পিন দেয়ার পর অ্যাপ-এ হোম স্ক্রিন আসবে। এখান থেকে পে বিল-এ যেতে হবে।
২/ পে বিল-এর স্ক্রিণে প্রতিষ্ঠানের ধরনের ক্যাটাগরি থেকে বিদ্যুৎ-এ ট্যাপ করলে নিচের দিকে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেখাবে।
৩/ যে বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়া হবে সেটি নির্বাচন করতে হবে।
৪/ এবার পোস্ট পেইডের ক্ষেত্রে বিলের সময়সীমা লিস্ট থেকে যে মাসের বিদ্যুৎ বিল দেয়া হবে সে মাস নির্বাচন করে কাস্টমার নাম্বার দিতে হবে। এই আইডি নাম্বারটি মুলত আট অঙ্কের একটি সংখ্যা যেটি প্রতি মাসে সরবরাহকৃত বিগত মাসের বিদ্যুৎ বিলের কপিতে উল্লেখ থাকে। প্রিপেইডের ক্ষেত্রে এ অংশে অ্যাকাউন্ট, যোগাযোগ ও রেফান্সে নাম্বার দিতে হবে।
৫/ বিলের সময়সীমা নির্বাচনের সাথে সাথে নির্দিষ্ট মাসের জন্য ধার্যকৃত বিদ্যুৎ বিল দেখাবে। পরের স্ক্রিণে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণটি উল্লেখ করে পিন নাম্বার দিতে হবে। অতঃপর বিকাশ অ্যাকাউন্টে যথেষ্ট ব্যালেন্স থাকলে কনফার্ম বাটন চাপ দিয়ে ধরে রাখলে বিল পরিশোধ সম্পন্ন হবে।
৬/ বিল জমার সাথে সাথেই জমা রশিদ দেখা ও ডাউনলোড করে রাখা যাবে।
অন্যদিকে প্রিপেইডের ক্ষেত্রে বিল জমা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে এসএমএস-এর মাধ্যমে একটি টোকেন নাম্বার দেয়া হবে।
এভাবে টোকেন নাম্বার না পেলে মোবাইলের মেসেজ অপশন থেকে মিটার নাম্বার লিখে মেসেজ করতে হবে ০৪৪৪৫৬১৬২৪৭ নাম্বারে। তখন ফিরতি এসএমএস-এ পাওয়া যাবে কাঙ্ক্ষিত টোকেন নাম্বারটি।
৭/ প্রাপ্ত টোকেন নাম্বারটি প্রিপেইড মিটারে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সম্পন্ন হবে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ।
আরও পড়ুন: দৌড়ের সময় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি: কারণ এবং ঝুঁকি কমাতে করণীয়
অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা সমূহ
বিকাশের পাশাপাশি অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো সরকারি পেমেন্ট গেটওয়ে নগদ। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনামূল্যে পরিশোধ করা যায় বিদ্যুৎ বিল। এছাড়াও আছে ডিবিবিএল(ডাচ বাংলা ব্যাংক)-এর রকেট ও নেক্সাস অ্যাপ, রবি আজিয়াটার রবিক্যাশ, রূপালি ব্যাংকের শিওর ক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাইকেশ, গ্রামীণফোনের জিপে এবং এটুআইয়ের একপে।
পরিশেষে
বিদ্যুৎ বিল হাতে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থেকে বিল জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহের দিন শেষ। এখন দেশের যে কোন জায়গা থেকে ঘরে বসে অথবা চলমান যে কোন অবস্থাতেই নিশ্চিন্তে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যায়। মোবাইল অ্যাপগুলোর পাশাপাশি ইন্টারনেট ব্যাংকিং-এর সেবাগুলোর মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিলের কপি দেখা সহ বিল জমা দেয়া যাচ্ছে। ডিবিবিএল-এর ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সরাসরি ডিপিডিসি(ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) এবং ডেসকো (ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড)-এর ওয়েবসাইট থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা যায়।
আরও পড়ুন: শিক্ষা সনদপত্র হারিয়ে গেলে করণীয়