ঈদের ছুটি মানেই বিরামহীন কর্মব্যস্ততা থেকে বড় সময়ের জন্য অব্যাহতি। কর্মচাঞ্চল্যে আষ্টেপৃষ্ঠে বাধা ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলো মুখিয়ে থাকে এই মৌসুমের জন্য। ছুটির পরিসরটা পর্যাপ্ত হওয়ায় অনেকেই চিন্তা করেন দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু যখন ভিসা জটিলতার ব্যাপার আসে, তখনই ছুটিকে ঘিরে যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়। তাছাড়া ট্যুর শেষ করে অফিস শুরুর আগেই তাড়া থাকে দেশে ফেরার। এই দুটো শর্ত পূরণেই অনেকটা সহায়ক ভূমিকা পালন করে এশিয়ার ভিসামুক্ত দেশগুলো। হেনলি পাসপোর্ট ইন্ডেক্স অনুসারে ২০২৪ সালে এশিয়ার ৪টি দেশের ভিসা নিয়মনীতি শিথিল রয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য। চলুন, সেই দেশগুলোর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
এই ঈদে ভিসা ছাড়াই ঘুরে আসতে পারেন এশিয়ার যে দেশগুলোতে
ভুটান
পূর্ব হিমালয়ে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত এই দেশটির উত্তরে চীন এবং দক্ষিণে ভারত। একদিকে স্থাপত্যশিল্পের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ, অন্যদিকে রাফটিংয়ের জন্য এশিয়ার সেরা গন্তব্যগুলোর একটি এই ভুটান। দেশটির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গাংখার পুয়েনসাম বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়া, যেটি এখন পর্যন্ত আরোহণ করা সম্ভব হয়নি। ভুটানের বিশেষত্বের মাঝে আরও রয়েছে এর বৈচিত্র্যপূর্ণ বন্যপ্রাণী, যার মধ্যে রয়েছে হিমালয় টাকিন এবং সোনালি ল্যাঙ্গুর।
ভুটানের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা
পারো
বিমান বন্দর থেকে নেমেই সোজা চলে যেতে হবে ভুটানের সর্বোচ্চ রাস্তা লা পাসে’তে। কেননা এখান থেকে দেখা মিলবে জলমহরি পর্বতের মোহনীয় দর্শন। অন্যান্য দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে টাইগারস নেস্ট, কিচু মনস্ট্রি, পারো চু, রিনপুং জং, পারো মনস্ট্রি এবং তাং সাং।
আরও পড়ুন: ১০ হাজার টাকা বাজেটে দেশের বাইরে কোথায় ঘুরতে যাবেন?
থিম্পু
সমদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৩৭৫ থেকে ৮ হাজার ৬৮৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রাজধানী শহর থিম্পুর সর্পিলাকার রাস্তা উন্মাদকতা তৈরি করে পর্যটকদের মনে। রংবেরঙ্গের বাড়িগুলো যেন রঙের ফেরিওয়ালা।
শহরেই ঘোরার মাঝেই চোখে পড়ে মেমোরিয়াল চর্টেন, সিটি ভিউ পয়েন্ট, ক্লক টাওয়ার, থিম্পু জং, থিম্পু নদী, পার্লামেন্ট হাউস ও থিম্পু ডিজং।
পুনাখা
যাওয়াটা বেশ সময় সাপেক্ষ হলেও বিস্ময়কর সুন্দর দোচুলা পাস থেকে ফেরার পথে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে পুনাখার অন্যান্য সৌন্দর্য্যগুলোও। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পুনাখা জং, ফোক হেরিটেজ মিউজিয়াম, আর্ট স্কুল ও ন্যাশনাল লাইব্রেরি। রাফটিংয়ের জন্য ভুটানের খ্যাতিটি মূলত এই পুনাখার কারণেই।
আরও পড়ুন: ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ ১০ দর্শনীয় স্থান: শীতের ছুটিতে সাধ্যের মধ্যে ভ্রমণ
ভুটানের ভিসামুক্ত ভ্রমণ রীতি
ভুটানে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো ভিসার প্রয়োজন হয় না। তবে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ বাংলাদেশ প্রস্থানের তারিখ থেকে অন্তত ৬ মাস বেশি থাকতে হয়। সেই সঙ্গে কমপক্ষে দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকা আবশ্যক। ভুটানে প্রবেশের আগ মুহূর্তে কাস্টমস কর্মকর্তা এগুলোর একটিতে ভিসা স্ট্যাম্প যুক্ত করে দেন।
এ সময় এসডিএফ (সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি) হিসেবে প্রতি দিনের জন্য ২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। বাংলাদেশি টাকায় এটি ২১ হাজার ৮৫২ টাকার (১ মার্কিন ডলার = ১০৯ দশমিক ২৬ বাংলাদেশি টাকা) সমান। ৪ দিনের এসডিএফ দিয়ে অতিরিক্ত আরও ৪ তথা মোট ৮ দিন থাকা যায়।
ভুটান ভ্রমণ খরচ
ভিসা ছাড়া ঢাকা থেকে ভুটান গমনের আকাশপথই একমাত্র উপায়। রাউন্ড ট্রিপের টিকিট কেটে রাখলে খরচ হবে ৬৭৩ থেকে ৮৪২ মার্কিন ডলার, যা ৭৩ হাজার ৫৩৫ থেকে ৯২ হাজার টাকার সমান। বিমানে মাত্র ১ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে ভুটানের পারোতে পৌঁছা যায়।
৫ দিনের ভ্রমণের জন্য এখানে খরচ হতে পারে জনপ্রতি কমপক্ষে ১৬ হাজার ৬৫০ থেকে থেকে ৩৭ হাজার ৮৮০ গুলট্রাম। বাংলাদেশি টাকায় যেটি ২১ হাজার ৮৫৪ থেকে ৪৯ হাজার ৭১৮ টাকার (১ ভুটানি গুলট্রাম = ১ দশমিক ৩২ টাকা) সমতূল্য। এর মধ্যেই থাকা-খাওয়াসহ অভ্যন্তরীণ যাতায়াত খরচ অন্তর্ভূক্ত।
আরও পড়ুন: সাধ্যের মধ্যে মালদ্বীপের বিকল্প হতে পারে এশিয়ার যেসব ট্যুরিস্ট স্পট
মালদ্বীপ
ভারত মহাসাগরে মাঝে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্রটি এশিয়ার সবচেয়ে ছোট দেশ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর স্থলভাগের উচ্চতা ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি এবং সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক বিন্দু মাত্র ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি। যে কারণে মালদ্বীপ বিশ্বের সর্বনিম্ন দেশ হিসেবে পরিচিত।
মালদ্বীপে কোথায় ঘুরবেন
মালে
মালদ্বীপের সবচেয়ে বড় এই শহরের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে দেশের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর সঙ্গে। এখানকার আকর্ষণ প্রবাল পাথরে বানানো হুকুরু মস্ক বা ওল্ড ফ্রাইডে, ভারুনুলা রালহুগান্ধু, মালে মাছ বাজার, সুনামি স্মৃতিস্তম্ভ, মালে জাতীয় জাদুঘর এবং মুলি আজ প্যালেস। স্নোর্কেলিং ও সার্ফিংয়ের স্বর্গরাজ্য এই মালে দ্বীপ।
হুলহুমালে দ্বীপ
মালদ্বীপের বৃহত্তম এই দ্বীপটি মূলত বাজেট হোটেল বা রেস্তোঁরার জন্য বিখ্যাত। রাজধানী মালে থেকে কাছাকাছি হওয়াতে নিমেষেই চলে আসা যায় হুলহুমলে সেন্ট্রাল পার্ক, হুলহুমলে বিচ, হুকুরু মিসকি এবং এইচডিসি বিল্ডিং দেখতে।
আরও পড়ুন: দিল্লি ভ্রমণ গাইড: যাওয়ার উপায় ও আনুষঙ্গিক খরচ
ভবিনফারু দ্বীপ
এখানে ভিড়ের প্রধান কারণ হলো সৈকতের বন্যান ট্রি ভবিনফারুর ঘরগুলো। ঘুরে দেখার সময় পর্যটকগণ জেট স্কিইং, প্যারাসেইলিং এবং স্নোর্কেলিং করতে কখনই ভোলেন না।