প্রাণঘাতি এ ভাইরাসের কোনো টিকা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসুখের সাথে লড়াই করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনো বিকল্প নেই।
চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ দিনের কোনো অসুস্থতা, অনিদ্রা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান সব কিছুই রোগ প্রতিরোধ কমিয়ে দেয়। এ সময়ে সঠিক পুষ্টি না পেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর তা বিশেষভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য শরীরচর্চার পাশাপাশি এমন কিছু খাবার নিয়মিত খেতে হবে যা শরীরকে মজবুত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধও করবে।
চলুন জেনে নেই আমাদের শরীরকে ভিতর থেকে মজবুত আর রোগ প্রতিরোধী করে তোলে এমন সাতটি খাবার সম্পর্কে-
আম: গ্রীষ্মের অন্যতম রসালো এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা শরীরের ভিটামিনের অভাব পূরণের পাশাপাশি কর্মশক্তি যোগায়। এছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি, যা শরীরে শক্তি তৈরি করে।
আমের আয়রন, আঁশ, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও খনিজ উপাদান শরীর সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। ক্যারোটিন চোখ সুস্থ রাখে, সর্দি-কাশি দূর করে। কাঁচা আমে ৯০ মাইক্রোগ্রাম এবং পাকা আমে ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। আম থেকে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে এবং দাঁত, মাড়ি, ত্বক ও হাড়ের সুস্থতা রক্ষা করতেও সাহায্য করে।
লেবু: প্রাত্যহিক জীবনে আমরা সবাই কম বেশি লেবু খেয়ে থাকি। সাধারণত খাবারের স্বাদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়। লেবু আকারে ছোট ফল হলেও এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর। লেবুর উচ্চ ভিটামিন যা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যেকোনো ভাইরাস জনিত ইনফেকশন যেমন- ঠান্ডা, সর্দি, জ্বর কমাতে লেবু খুব কার্যকারী।
যারা খাবারে যথেষ্ট পটাশিয়াম গ্রহণ করেন না, তারা সহজেই বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগে আক্রন্ত হয়ে পড়েন। লেবুর রসে যথেষ্ট পরিমান পটাশিয়াম রয়েছে যা হাইপারটেনশন কমাতে সহায়তা করে। যাদের হালকা শ্বাসকষ্ট আছে, তারা নিয়ম করে খাবারের আগে এক চামচ লেবুর রস খেতে পারেন। যারা মাইল্ড অ্যাজমায় ভুগছেন, লেবুর রস তাদের জন্য ওষুধের বিকল্প হিসেবেই কাজ করবে।
কমলা ও মাল্টা: কমলালেবুতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি৷ প্রতি ১০০ গ্রাম কমলালেবুর মধ্যে ৫০ মিলিগ্রামই ভিটামিন সি থাকে৷
স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য এই ফল শুধু খেতেই মজা নয়, এতে রয়েছে খুবই কম ক্যালোরি৷ এক গ্লাস কমলার রস প্রতিদিন সকালে পান করলেই দিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি-এর অভাব পূরণ হয়ে যাবে৷
তরমুজ: গ্রীষ্মকালে যেসব ফল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে তরমুজ উল্লেখযোগ্য। তরমুজের রসালো মিষ্টি স্বাদের জন্য সবার কাছে এটি অত্যন্ত প্রিয় একটি ফল। গরমের সময় তরমুজ দেহমনে প্রশান্তি আনে। শুধু তাই নয় পুষ্টি গুনে ভরা তরমুজ দেহের পুষ্টি চাহিদাও দ্রুত পূরণ করে।
তরমুজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। এছাড়া তরমুজে যে পটাশিয়াম থাকে তা মানব দেহে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। পুষ্টিবিদদের মতে, তরমুজ হৃদরোগ, হাঁপানী, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শশা: পোকামাকড়ের হাত থেকে যে পলিকেমিক্যাল শশাকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে সেই পলিকেমিক্যালগুলোই মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়তে সাহায্য করে।
এছাড়া শশায় ভিটামিন সি, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্ল্যাভেনয়েডস, ট্রিটারপেনেস, লিগনান নামের পলিফেনল অক্সিডেটিভ রয়েছে যা স্ট্রেস কমাতে, শরীরের ব্যাড কোলেস্টেরল কমাতে এবং রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
টক দই: এতে আছে প্রচুর পরিমান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত উপকারী। এটা শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
এতে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা কোষ্টকাঠিন্য দূর করে ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে। যারা দুধ খেতে পারেন না বা দুধ যাদের হজম হয় না, তারা অনায়াসেই টক দই খেতে পারেন। কারণ টক দইয়ের আমিষ দুধের চেয়ে সহজপাচ্য। ফলে কম সময়ে এটি হজম হয়।
পুদিনা: পৃথিবীতে এমন অনেক উদ্ভিদ আছে যেগুলোতে প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। পুদিনা পাতা তার মধ্যে অন্যতম।
সাধারণ আগাছা ধরনের এই গাছটির কাণ্ড ও পাতা উপকারি। পুদিনায় রোজমেরিক অ্যাসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না।
সূত্র: এই সময়