সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন জাফলংয়ের জনপ্রিয় ও প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি থেকে গত সাত মাসে ৪০ লাখ টাকা আয় করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষদিকে জাফলংয়ে প্রবেশে চালু করা হয় ফি। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে জনপ্রতি এখন ১০ টাকা ফি দিয়ে টিকিটের মাধ্যমে পর্যটকদের প্রবেশ করতে হয় জাফলংয়ে।
এদিকে, ফি চালুর পর থেকে অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন। জাফলংয়ের টিকিট কাউন্টারে বৃহস্পতিবার (৫ মে) পর্যটকদের মারধরের ঘটনার পর আবারও টিকিটের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
আগে পর্যটকরা জাফলং জিরো পয়েন্টে যেতেন বল্লাঘাট এলাকা দিয়ে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন গুচ্ছগ্রাম এলাকা দিয়ে পর্যটক প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যটকদের ওঠানামার সুবিধার জন্য বানানো হয়েছে সিঁড়ি। আর গুচ্ছগ্রামে বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই বসানো হয়েছে টিকিট কাউন্টার।
প্রবেশ ফি চালুর বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘গত বছর জেলা পর্যটন কমিটির সভায় ফি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। উপজেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এটি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মীর মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ফি আদায় করে।’
তিনি বলেন, ‘জাফলং পরিষ্কার রাখাসহ পর্যটকদের সেবা দেয়ার জন্য কিছু অস্থায়ী কর্মী রাখা হয়েছে। এই টাকায় ঘণ্টাপ্রতি ৫০ টাকা হিসাবে তাদের বেতন দেয়া হয়। কর্মীর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। সর্বনিম্ন পাঁচ-ছয়জন থেকে সর্বোচ্চ ৩০ জন কাজ করেন।’
পর্যটকদের ওপর হামলাকারীদের সম্পর্কে তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক বলা হলেও আসলে তারা স্বেচ্ছাসেবক নন। সম্মানির বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। অন্যদের থেকে তাদের আলাদা করার জন্য অ্যাপ্রোন দেয়া হয়েছে।’
পর্যটকদের সেবার মান বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘১০ টাকার বিনিময়ে আমরা পর্যটকদের কয়েকটি সেবা দেই। পর্যটন এলাকায় ড্রেস চেঞ্জ করার রুম ও টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা এগুলো বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। সেই সঙ্গে রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা। এ ছাড়া প্রবেশ ফি দিয়ে পর্যটন এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখারও কাজ করা হয়। টিকিট দেখালে পর্যটকরা সহজে ও নির্ধারিত দামে ফটোগ্রাফার, ট্যুর গাইড ও নৌকার মাঝি পান।’
জমা হওয়া টাকার বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘টিকিট ফি থেকে প্রতিদিন সমান টাকা ওঠে না। একেক দিন একেক রকম হয়। আমি দিনে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা আদায় হতে দেখেছি। উপজেলা পর্যটন কমিটি নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। এই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ ফি জমা হয়। ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেন। এখন পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকা জমা হয়েছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার গোয়াইনঘাট প্রশাসনের নিয়োগকৃত স্বেচ্ছাসেবকরা জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে নারী ও শিশুসহ একদল পর্যটককে লাঞ্ছিত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুপুর ২টার দিকে টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় উপজেলা প্রশাসনের টোল কাউন্টারে নিযুক্ত কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক।
পড়ুন: জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় আটক ৫
প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ও জাফলং সাব জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক ঘটনাস্থলে যান। পরে হামলাকারী পাঁচ স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। হামলার ঘটনায় আহত সুমন নামের এক পর্যটক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে গোয়াইনঘাট থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- গোয়াইঘাটের পন্নগ্রামের মৃত রাখা চন্দ্রের ছেলে লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস (২১), ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো. সেলিম আহমেদ (২১), নয়াবস্তি এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে সোহেল রানা, পশ্চিম কালীনগর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে নাজিম উদ্দিন ও ইসলামপুর রাধানগর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দীনের ছেলে জয়নাল আবেদীন। তাদেরকে শুক্রবার দুপুরে সিলেটের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার (৬ মে) সকাল থেকে আগামী সাত দিন পর্যটকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের টিকিট বাবদ টাকা আদায় করা হবে না। জাফলং সবার জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও (ইউএনও) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পর্যটকদের জন্য আগামী সাত দিন জাফলং উন্মুক্ত থাকবে।