মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে আগামীকাল ৫৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে জাতি।
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর দমন-পীড়নের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
ত্রিশ লাখ শহীদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও দুই লাখ নারীর সম্মানে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্জিত হয় তার লালিত স্বাধীনতা।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু সব সময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। বর্তমান সরকার তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। দারিদ্র্য হ্রাসের পাশাপাশি মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্ণফুলী টানেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজও সুষ্ঠুভাবে চলছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অর্জিত হবে। বাংলাদেশ একটি উন্নত-ধনী-স্মার্ট দেশে পরিণত হবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “আমাদের ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছি। আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি করেছি। শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা পদ্মা নির্মাণ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু ও মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি।এছাড়া জাতির পিতার খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। আসুন বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলি। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, এটাই হোক স্বাধীনতা দিবসে আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।”
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বন্দুকের স্যালুট ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে সরকারি ছুটি শুরু হবে।
সূর্যোদয়ের সময় সকল সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সব ভবন ও স্থাপনা আলোকিত করা হবে।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবস: মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
জাতীয় দৈনিকগুলো, বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেসরকারি রেডিও স্টেশন ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শিশুদের জন্য সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রাঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।
মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে সম্মাননা দেয়া হবে। বাংলাদেশ ডাকঘর বিভাগ দিবসটি উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবে।
এদিকে দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল করবে।
হাসপাতাল, জেল, শিশু নিবাস, বৃদ্ধাশ্রম, ডে কেয়ার সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মানের খাবার বিতরণ করা হবে।
শিশু উদ্যান ও জাদুঘরগুলো সারাদিন সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুরূপ কর্মসূচির আয়োজন করা হবে।