অক্সিজেন সরবরাহের ঘাটতির কারণে পাবনা ২৫০ বেড জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জন মারা গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মৃতরা হলেন পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের মৃত দায়েন বিশ্বাসের স্ত্রী রাশিদা বেগম (৭০), ঈশ্বরদীর চরকুরুলিয়া গ্রামের মৃত কোরবান সরকারের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন (৭০), পাবনার শহর এলাকার নূরে আলম (৬৭) এবং নাজমুল ইসলাম (৭২)।
আরও পড়ুনঃ ফরিদপুরে করোনা ও উপসর্গে আরও ১২ জনের মৃত্যু
তবে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী তিন জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্বে থাকা একজন সিনিয়র চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পাবনা হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। হাসপাতালে এসেও রোগীদের বাইরে থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাতেও সংকট কাটছে না। ঘাটতির কারণে ঠিকমত অক্সিজেন সরবরাহ করতে না পারায় রোগীরা মারা গেছেন।
আরও পড়ুনঃ খুলনায় করোনায় আরও ১৭ মৃত্যু
নিহত রাশিদা বেগমের বড় ছেলে মো. আলমগীর হোসাইন বলেন,’আমার আম্মাকে রবিবার দুপুরে ঠাণ্ডা জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সদরের করোনা ইউনিটে ভর্তি করেছিলাম। শুরু থেকেই অক্সিজেন সংকট ছিল। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অন্তত ৮-১০ বার বলার পরও তারা আমার মায়ের জন্য একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেয়নি। পরিশেষে অক্সিজেন সংকট নিয়েই মায়ের মৃত্যু হলো।
তিনি জানান, এ সময় হাসপাতালের প্রতিটি রোগী প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন। অক্সিজেনের অভাবে তার সামনেই পর পর তিনজন রোগীর মৃত্যু হলো।
আরও পড়ুনঃ নাটোরে করোনায় নতুন শনাক্ত ১৮৩
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘অনেক আশা ভরসা নিয়ে মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম, ভেতরে ঢুকেই দেখি ন্যূনতম কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। নার্সরা ঠিকমত ডিউটি করছেন না।’
করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ভাই মামুন হোসেন জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। অনেক ভালো রোগীকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করে রেখেছে। আমার বোনকে ১২ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। পরের দিন করোনা পরীক্ষার নমুনা দিলে আজ ১১ দিন অতিবাহিত হলেও কোন ফলাফল পাচ্ছিনা। যার কারণে আমাদের রোগী এখন সুস্থ হলেও এই ওয়ার্ডে ভর্তি করে রেখেছে।
অক্সিজেন সংকটে মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ডা. সালেহ মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই শেষ সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। তখন আসলে কিছুই করার থাকে না। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই করোনা আক্রান্ত হয়ে শেষ সময়ে হাসপাতালে এসেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ রামেকের করোনা ইউনিটে আরও ১৮ মৃত্যু
তিনি জানান, জেনারেল হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন চালু না থাকায় অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দিচ্ছে। মেডিফোল্ড সিস্টেমে বড় বোতলে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়েছে। তবে রোগীর চাপের সাথে পাল্লা দিতে আরও অক্সিজেন প্রয়োজন।
পাবনা সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জন নতুন আক্রান্তসহ এক সপ্তাহে ১ হাজার ১১৬ জন কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন। এই সময়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬ জনসহ এক সপ্তাহে ভর্তির সংখ্যা ৩৫। সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন।