বগুড়ার গাবতলীর সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির নিখোঁজ ছাত্রী নাজনীন আক্তারের লাশ ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ওই ছাত্রীকে তার স্বামী সাকিব হোসেন হত্যা করেছে বলে স্বীকারোক্তি দেয়ায় বরিশালের বাবুগঞ্জ ও গৌরনদীর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিনদিনের মাথায় লাশ উদ্ধার করা হয়।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে নাজনীন আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, ফেসবুকের মাধ্যমে বগুড়া সেনা নিবাসের ঝাড়ুদার সাকিব হোসেনের সাথে বগুড়া সদরের সাবগ্রামের আব্দুল লতিফের মেয়ে কলেজ ছাত্রী নাজনীন আক্তারের পরিচয় হয়। ভূয়া ঠিকানা দিয়ে গত বছরের ১ অক্টোবর নাজনীনকে বিয়ে করে সাকিব।
নাজনীনের ভাই আব্দুল আহাদ জানান, গত ২৪ মে বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোরে বাবার ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে সাকিব। ওইদিন স্বামীর দারিদ্রতা নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে নাজনীনকে হত্যা করে লাশটি বাসার পাশে সেফটিক ট্যাকিংতে ফেলে দেয় সে। দুদিন ধরে নাজনীন ও সাকিবের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় সাধারন ডায়েরি করে তার বাবা। এর সূত্র ধরে সাকিবকে আটক করে পুলিশ। সাকিব তার স্ত্রীকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করায় পর সেই অনুযায়ী গত তিন দিন ধরে বরিশালের দুই উপজেলায় নাজনীনের লাশ উদ্ধারে অভিযান চালায় পুলিশ।
সাকিব হাওলাদার জানায়, নিজেকে অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের ছেলে পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করেছিল সে (সাকিব)। ২৪ মে স্ত্রী নাজনীনকে নিয়ে গৌরনদীর বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় আসে। সেখানে এসে স্ত্রী নাজনিন জানতে পারে তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যান চালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এসময় সাকিবের কাছে নাজনীন এসব কথা গোপন করার কারণ জানতে চাইলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে সে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে শ্বাসরোধ করে নাজনিনকে হত্যা করে।
সোমবার সাকিবের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জের নতুন চরজাহাপুর গ্রামের বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় স্থানীয় থানা পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি চালায় বগুড়া সদর থানা পুলিশ। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে পার্শ্ববর্তী গৌরনদী থানা পুলিশের সহায়তায় ওই উপজেলার বাটাজোরের হরহর গ্রামে সাকিবের বাবা করিম হাওলাদারের ভাড়া বাসা সহ আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায় তারা। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে ভাড়া বাড়ির সেফটিক ট্যাকিং থেকে একটি ওড়না এবং একটি নখের অংশ বিশেষ উদ্ধার হয়। তবে তার লাশ উদ্ধার হয়নি। তৃতীয় দিনের গৌরনদী থানা পুলিশের অভিযানে নাজনীনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: ফেনীতে বদ্ধ ঘর থেকে ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সংলগ্ন একটি ধানক্ষেত থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের ধারণা সেটা নাজনীনের লাশ। নাজনীনের বাবা-মাকে বরিশালে আসতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।