পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বাঁধভাঙা পানিতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এছাড়া ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে মান্দা উপজেলার চারটি স্থানে এবং আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ হাট ও বৈঠাখালি এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। এর আগে বুধবার রাতে মান্দা উপজেলার জোকাহাট, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি ও পার নুরুল্ল্যাবাদ এলাকায় বাঁধ (মান্দা-আত্রাই সড়ক) ভেঙে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে সোমবার থেকে নওগাঁর বিভিন্ন পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। মঙ্গলবার ও বুধবার মান্দায় সাতটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাত গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই সাথে বুধবার রাতে চারটি স্থানে মূল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে অন্তত ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়।
মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের জিল্লুর রহমান জানান, মঙ্গলবার থেকে চকরামপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ওই দিন থেকেই এলকাবাসী বালির বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হলো না। পানির চাপে বুধবার রাত ৮টার দিকে বাঁধের ৫০ মিটার অংশ ভেঙে যায়। মূহূর্তের মধ্যে গ্রামের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নওগাঁ কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ার্দার মো. আসাদুল্লাহ জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত নওগাঁর জোতবাজার পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদ সীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ছোট যমুনার পানি বিপদ সীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আশ্রয়ের জন্য ইতোমধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দাশপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও চককামদেব উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্র এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা বিভিন্ন উঁচু রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন তাদের আজ থেকেই ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ জানান, বন্যার পানিতে বুধবার পর্যন্ত মান্দা, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার ২ হাজার ৪০৯ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। নতুন করে ছয়টি স্থানে ভাঙনের ফলে তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ চলছে।