নেত্রকোণায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
পুলিশ জানায়, বুধবার ও বৃহস্পতিবার নেত্রকোনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া, লোকীগঞ্জ ইউনিয়ন এবং বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ও রায়পুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে নেত্রকোণা মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু বকর সিদ্দিক দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ ও বিদ্রোহী প্রার্থী ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম ‘মোটরসাইকেল’ প্রতীক পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচনের সহিংসতা: মানিকগঞ্জে আ’লীগ নেতার ছেলে গ্রেপ্তার
প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই দুই প্রার্থীর সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ বিশিউড়া বাজারে তারা একে অপরের মুখোমুখি হলে তাদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়, এতে ১৫ জন আহত হন।
এ সময় দক্ষিণ বিশিউড়া বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসের চেয়ার-টেবিল, আসবাবপত্র, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর ও নৌকার প্রার্থীর ছবিসম্বলিত পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়।
আবু বকরের সমর্থক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালিয়ে অফিসের আসবাবপত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করেছে।’
তবে কালাম বলেন, ‘আমার কোনো কর্মী সমর্থক হামলা-ভাঙচুর করেনি। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকার লোকজন বিষয়টি ভালো জানে।’
একই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা বিএনপি নেতা ও বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল কাদের সুজা ‘চশমা’ প্রতীক পান। তার সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণায় বের হলে ইউনিয়নের সুলতানগাতী বাজারে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজহারুল হক তুহিনের সমর্থকরা তাদের ওপর হামলা চালালে পাঁচ জন আহত হন।
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী ঘোষণা
বৃহস্পতিবার সকালে বারহাট্টার রায়পুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজুর নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী আলী আকবর তালুকদারের সমর্থকরা তাদের অটোরিকশা ও মাইক ভাঙচুর করে।
এদিকে, বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নে বুধবার রাতে বিএনপি প্রার্থী সুজন চৌধুরীর বাসা ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলাকারীরা তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং পাঁচ জনকে পিটিয়ে আহত করে।
বিএনপি নেতা দাবি, আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন তার বাড়িতে হামলা করেছে।
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা [সহিংসতা ও ভাংচুরের] হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাগুলো।’
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে ইউপি নির্বাচন: প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী জানান, ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাতে সহিংস ঘটনা না ঘটে তার জন্য প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।