কক্সবাজারের রামুতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে খুন করে দু’টি গরু লুট করেছে ডাকাত দল। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতদের চিনে ফেলায় ওই যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।
লুট হওয়া গরু দু’টির মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, রাত ৩টার দিকে তার গোয়াল ঘরে থাকা সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাত দল। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাই ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছুটাছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাত দল সাতটি গরু গাড়িতে তুলতে শুরু করে। এসময় তারা গরুগুলো কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তখন ডাকাতরা ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক।
তিনি আরও জানান, নিহত মীর কাশেম তার ভাতিজা। রাতে ঘটনার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে স্থানীয়রা মীর কাসেমের মৃতদেহ পাশ্ববর্তী সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যায়।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে অজ্ঞাত বৃদ্ধের লাশ
গরু লুট করতে আসা ডাকাতরাই মীর কাশেমকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন মোহাম্মদ আলী।
সকালে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) অরুপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার অভিযোগ করেন যে ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯-এ কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘন্টারও বেশি সময় পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা বাড়ির সদস্যদের ৯৯৯-এ কল করায় তাদের বকাঝকা করেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, চুরি হলে আমরা কি করবো, ডাকাতি হলে আসতাম। এসময় স্কুলছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো?
তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি। সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। তাছাড়া গভীর রাত হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিল। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর করে এবং হাত-পা-মুখ বেঁধে হত্যা করে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে বিদেশি অস্ত্রসহ ৬ রোহিঙ্গা ডাকাত আটক
মোহাম্মদ আলীর জামাই ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দুজন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেঁধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজনকে ধরে রাখলে আরও চারজন ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লেও তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড়সড় দুটি গরু নিয়ে ডাকাতরা গাড়িযোগে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মৃতদেহ পাওয়া গেছে সকালে। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।
উল্লেখ্য, রামুতে সাম্প্রতিক সময়ে গরু ডাকাতির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচদিন পূর্বে রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার নুরুল হকের বাড়িতেও ডাকাত দল হানা দিয়ে চারটি গরু লুট করেছে। একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ডাকাতির সময় হত্যার দায়ে ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড