ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমে যাওয়ায় তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর। এক মাস ধরে উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের হবিগঞ্জ-খেয়ারচর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন এলাকাবাসী।
ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, ৯০০ বিঘা ফসলি জমিসহ প্রায় তিনশ' বসতবাড়ি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে এসব পরিবার সর্বশান্ত হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
এ ছাড়াও ভাঙনের হুমকির কবলে রয়েছে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়, গেন্দার আলগা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাতলামারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর নামাজের চর কমিউনিটি ক্লিনিক, উত্তর নামাজের চর নূরাণী ও হাফিজিয়া মাদরাসা, উত্তর নামাজের চর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ পাকা সড়ক।
অভিযোগ রয়েছে, বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নদী ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ করেননি।
ফলে নিরুপায় হয়ে রবিবার দুপুরে সাহেবের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সাহেবের আলগা, হবিগঞ্জ, উত্তর নামাজের চরসহ আশপাশের এলাকার সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, সাহেবের আলগা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন, প্রভাষক রফিকুল ইসলাম, সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, ফজলুল হক, শিক্ষার্থী ইরিকা খাতুন, বিউটি খাতুন প্রমুখ।
গেন্দার আলগা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইরিকা খাতুন বলেন, আমদের এই জায়গায় অনেক মানুষ বসবাস করত। নদী ভাঙনে সবাই ভিটেমাটি হারা হয়েছে। এখনও নদী ভাঙছে আমরা কোথায় যাব তা এখনও ঠিক হয়নি। নদী ভাঙনের ফলে আমাদের স্কুল হুমকির মুখে, স্কুল ভেঙে গেলে আমরা কোথায় পড়ব। এজন্য নদী ভাঙন রোধে আমরা মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। এখানে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বিউটি খাতুন বলেন, নদীতে পানি কমে যাচ্ছে, কিন্তু নদের ভাঙন কমছে না। এখানে আবাদি জমি-বাড়িঘর ভেঙে যাচ্ছে। এখানকার মানুষ কষ্ট করে বসবাস করছে।
ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা ভাঙন রোধে কাজ করার আশ্বাস দিলেও কোনো কাজ শুরু করে না। এলাকাবাসীর পক্ষে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জোর দাবি জানাচ্ছি।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙনরোধে সাময়িক সময়ের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে ভাঙনকবলিত এলাকার নোট দেওয়া আছে বরাদ্দ এলে কাজ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ