শনাক্ত হওয়ার পরও তারা প্রকাশ্যে চলাচল করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাজার-ঘাটেও যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের মাঝে ঘোরাফেরা করছেন। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
অবিলম্বে এলাকাটিকে লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: করোনায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৬ মৃত্যু, শনাক্ত ১৪৫৭
খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মে নির্মিতব্য ৩৩০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে কর্মরত ৯৭ জনের করোনা টেস্ট করার জন্য নমুনা দেয়া হয়। ১৮ মে তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে দেখা যায় ৯৭ জনের মধ্যে ৪২ জনই করোনা পজিটিভ।
আরও পড়ুন: টিকা পেতে কয়েকটি দেশের সাথে আলোচনা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল প্রথম ১০ জন চীনের নাগরিকের করোনা টেস্ট করা হয়। এর মধ্যে ৮ জনের পজিটিভ আসে। কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক ৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পাঠিয়ে দেন। আক্রান্ত অন্য ৫ জনকে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
জানা যায়, খালিশপুরে খুলনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের অভ্যন্তরে ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টে প্রায় ১৮৫ জন চীনের নাগরিক কাজ করছেন। ২০১৮ সালে ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্টটির কাজ শুরু হয়। এই প্রজেক্টে বাঙালি শ্রমিকের সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০ জন। এছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ২০০ শ্রমিক এই প্রজেক্টে অস্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য প্রবেশ করেন এবং রাতে বাড়িতে ফিরে যান। গত এক মাসে মোট ৮৫ জন চীনের নাগরিক করোনা পজিটিভ হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ১৮ মে ৪২ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হন। ওই দিন ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। ফলে এই প্রজেক্টে কর্মরত সবার মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: করোনা: এক বছরে শাবির ল্যাবে ৫৮ হাজার ৫৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে করোনা আক্রান্ত চীনের নাগরিকরা কোয়ারেন্টাইন মানছেন না। তারা বাইরে ঘোরাফেরা ও কেনা-কাটা করছেন। অনেকেই নিয়মিত কাজে অংশ নিচ্ছেন। এতে এই প্রজেক্টে কর্মরত সকলের মাঝে যেমন করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে, তেমনি আশপাশের এলাকায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। বিষয়টি নিয়ে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কর্মরত শ্রমিক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা শুনেছি প্রজেক্টে চীনাদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমাদের উপায় নেই, পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিনই চীনাদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে কার করোনা হয়েছে, আর কার হয়নি এটা বোঝার উপায় নেই।
বারেক হোসেন নামে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন বলেন, আমরা প্রতিদিনই চীনাদের ঘোরাফেরা করতে দেখি। এতে আমরা ভয়ে থাকি। করোনা সংক্রমণ নিয়ে কেউ যদি বাইরে আসে সেটা আমাদের বোঝার উপায় নেই।
এসব বিষয়ে পাওয়ার প্লান্টের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন বলেন, গত এক মাসে (১৮ এপ্রিল থেকে ১৮ মে) প্রজেক্টে কর্মরত ৮৫ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১৯ জনের ইতোমধ্যে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এখনও ৬৬ জন আক্রান্ত রোগী আছে। আক্রান্তরা নিজস্ব হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তারা বিদেশি নাগরিক, এমনিতেই স্থানীয়দের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করেন না।
তিনি বলেন, আক্রান্ত কেউ কাজে অংশ নেয়নি। তারা সকলেই করোনা টিকা নিয়েছেন।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ প্রজেক্টে কর্মরত করোনা আক্রান্ত চীনের নাগরিকেরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এত সংখ্যক চীনা কেন করোনা আক্রান্ত হলো-বিষয়টি দেখার জন্য আইইডিসিআর’র খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর তদন্তের জন্য সেখানে গিয়েছেন। তিনিই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।’
রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর ডা. হাসনাইন শেখ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিনি বৃহস্পতিবার প্রজেক্টে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানকার চীনা কমিউনিটিতে ঢুকতে দেয়া হয় না। যা কথা বলার তা ফোনেই বলতে হয়েছে। তাদের সকলের করোনার টিকা দেয়া আছে। তাদের নিজস্ব চিকিৎসকও রয়েছে। তবে আক্রান্ত চীনারা কাজে অংশ নিচ্ছেন কি-না বিষয়টি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।