গ্রেপ্তার দিলু শেখ (৪৭) গোয়ালন্দ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাইমুদ্দিন প্রামানিক পাড়ার মৃত রশিদ শেখের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পূর্বের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে প্রায় ৬ বছর আগে গোয়ালন্দ শহরের কাইমুদ্দিন প্রামানিক পাড়ার দিলু শেখের সাথে বিয়ে হয় ভিকটিমের মায়ের। এর আগে পূর্বের স্বামীর ঘরে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুলছাত্রীর (১৪) জন্ম হয়। দিলুর সাথে বিয়ের কয়েক মাস পর শহরের দেওয়ান পাড়ার বাবার বাড়িতে কন্যা সন্তানকে সাথে নিয়ে বাস করতে থাকেন।
আরও পড়ুন: ধর্ষণের শিকার গর্ভবতী তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করলো ৯৯৯
বুধবার বিকালে প্রতিদিনের মতো কন্যাকে বাবার বাড়ি রেখে পাশেই শহরের জামতলা বাজারে পিঠা তৈরি করে বিক্রি করতে যান ওই নারী। এ সুযোগে বিকাল ৫টার দিকে নানা বাড়ির ঘরের সাংসারিক কাজ করছিল সৎ কন্যা। এ সময় পেছন থেকে এসে দিলু তাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এ সময় সে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে পরিস্থিতি এমন দেখে বাবা দিলুকে আটক করে।
খবর পেয়ে বাড়ি পৌঁছে মেয়ের কাছ থেকে বিস্তারিত জানার পর বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করা হয়। পরে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মেয়ে, তার মা ও সৎ বাবাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
রাত ১২টার পর স্বামীর বিরুদ্ধে নিজের কন্যাকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা (নং-২৫) দায়ের করেন ওই নারী।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ স্কুলছাত্রীকে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। একই সাথে সৎ বাবা দিলু শেখকে গ্রেপ্তার করে রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ অভিযোগ
কম্বল দেয়ার কথা বলে প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
আরও পড়ুন: ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ১
ও লেভেল শিক্ষার্থীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যা’: মামলায় আসামির স্বীকারোক্তি
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।