চাঁদপুর সড়ক ও জনপদের প্রকৌশলীদের মতে, শহরে সুষ্ঠু পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় সরকারি কলেজ এলাকা, করিম পাটোয়ারী রোড, নাজিরপাড়া, বঙ্গবন্ধু সড়ক, প্রফেসর পাড়া, বাদশামিয়া রোড, মোল্লাবাড়ি রোড, তালতলা, রহমতপুর এলাকা ও আদালত পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকার লোকজন পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন।
এদিকে, মেঘনা ও পদ্মার প্রচণ্ড জোয়ার ও ঢেউয়ে নদীভাঙনের কারণে গৃহহারা হয়েছে রাজরাজেশ্বর ও ইব্রাহীমপুরে পাঁচ শতাধিক পরিবার। এ দুই ইউনিয়নে ফসলি জমিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দুই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাসেম গাজী ও হজরত আলী জানান, গৃহহারাদের তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও কোনো সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের লক্ষ্মীচরের স্বামীহারা গৃহবধূ নুর বানু বেগম জানান, নদীভাঙনের কবলে পড়ে লগ্গীমারা থেকে এখানে এসে ঘর নির্মাণ করেছিলেন। সেটাও কিছু দিন আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিরাপদ জায়গায় আবার ঘর উঠানোর মতো কোনো টাকা-পয়সা নেই তার।
বাঁশগারি গ্রামের আবুল বাশার বেপারি বলেন, ‘হঠাৎ জোয়ার ও বানের পানিতে আমাগো ধানের ফসল শেষ। আমরা এখন কেমনে খামু, কে খাওয়াইবো? সরকার থেকেও কিছু পাই নাই।’
চেয়ারম্যান হজরত আলী জানান, এবার নদীভাঙনে লক্ষ্মীরচর, জাহাজমারাচর, শিলারচর, খাসকান্দি ও আশপাশের এলাকা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহহারা হয়েছে এসব এলাকার ৩৮৫ পরিবার। জোয়ার ও বানের পানিতে মাঠের উঠতি ধান ও ফসলহানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে গোয়ালনগর, বাহেরচর, বলিয়ারচর, বাঁশগাড়ি ও মুগাদী গ্রামে।
মেঘনার পশ্চিম পাড়ের ইব্রাহীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম জানান, গত কিছু দিন ধরে বৃষ্টি ও বর্ষার পানিতে প্রায় ১০০ পরিবারের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও বিআইডব্লিউটিএ মাঠ নদীগর্ভে চলে গেছে। নদীভাঙন এখনও অব্যাহত আছে। গৃহহারা অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে গেলেও অর্থাভাবে ঘর পুনরায় নির্মাণ করতে পারছেন না। তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এক জরিপে দেখা গেছে, চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার পরিবার জোয়ারের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দী ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা বলেন, ‘জোয়ারের পানিতে সদরের হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু গত কয়েক দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছেন। এসব এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাইমচরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পানের বরজের। এছাড়া রাস্তাঘাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন পাটোয়ারি জানান, জোয়ারের পানিতে উপজেলার ছয় ইউনিয়নে প্রায় ২০ হাজারের বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধান সড়ক ও স্থানীয় রাস্তাঘাট, উঠতি ফসল, পানের বরজ ও পুকুরের মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।