বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা ২৩ জুলাই শেষ হওয়ার পরে চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত বোরো স্টেশন মাছ ঘাটে শিল্পটির সঙ্গে সম্পর্কিত জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) তিন দিন যাবত চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে বৃহৎ মাছবাজার বোরো স্টেশন মাছঘাটে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। এছাড়া ইলিশ মাছের আড়তে বহুল কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মাছের দামও কমছে।
সম্প্রতি বাজারে গিয়ে ইউএনবি’র চাঁদপুর প্রতিনিধি দেখতে পান যে- ভোলা, হাতিয়া, চর ফ্যাশন, লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের উপকূলীয় এলাকা থেকে জাল নিয়ে মাছঘাটে প্রচুর মাছ ধরার ট্রলার ও ট্রাক আসছে।
এদিকে স্থানীয়রা মাছঘাটে মাছ লোড-আনলোড করতে ব্যস্ত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ধরা পড়েছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, কক্সবাজারের জেলেদের মুখে হাসি
ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে মোট ৫০০ মণ মাছ এসেছে, প্রচুর সরবরাহের কারণে ইলিশের দাম কমাতে বাধ্য হয়েছে। এদিকে এক কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, আর ৫০০-৭৫০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় যা আগে ছিল ১ আহজার ৫০০ টাকা।
বিক্রেতা কেবলই বলছে, পদ্মা-মেঘনার ইলিশের দাম একটু বেশি। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এদের ৯০ শতাংশ ইলিশ মাছই সাগর ও তার আশ পাশ অঞ্চলের। বাকি ১০ শতাংশ মাছ পদ্মা-মেঘনার।
শহরের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যাচ্ছে যে, প্রায় এ দামেই ইলিশ কেনা-বেচা হচ্ছে।
চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বারী মানিক জমাদার জানান, গত ৩ দিনে ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও আগের বছরের মতো তেমন নেই। এছাড়া আষাঢ় মাসে তো মাছের আমদানি হওয়ার কথা দৈনিক কমপক্ষে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ মণ।
প্রবীণ ব্যবসায়ীদের ধারণা করছেন যে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময় ‘অসাধু’ জেলেরা রাতের আধাঁরে জাটকা ধরেছেন। তাই ইলিশের এ করুণ অবস্থা।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ এবং লাগামহীন বালু উত্তোলনের কারণে নদীর পানি কমে গেছে। আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। নদীর তলদেশে অনেক স্থানে ডুবন্ত চর জেগে ওঠায় মাছের স্বাভাবিক চলাচলের গতিপথ বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় মাছ এ পথে (চাঁদপুরের পথে) আসছে না।
তিনি বলেন, দূষিত পানিতে মাছ স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে না। তাছাড়া নদীর তলদেশে অনেক স্থানে ডুবন্ত চর জেগে উঠায় মাছের স্বাভাবিক চলাচলের গতিপথ বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় মাছ এ পথে (চাঁদপুরের পথে) আসছে না। নদীর তলদেশে হয়তোবা ইলিশ মাছ তাদের খাবারও পাচ্ছে না।
তাই তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সেকারনেই চাঁদপুরের জালে ধরা পড়ছে না কাংখিত ইলিশ। হতাশ হয়ে ফিরছে জেলেরা। তবে এখন থেকে আশা করি, ইলিশ মাছ পাওয়া যাবে। ইলিশ চাঁদপুরে সবে মাত্র আসতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে আরও আসবে ইনশাল্লাহ। হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এছাড়া আগামী দিনে পূর্ণিমায় ইলিশ মাছের সন্তোষজনক ধরা পড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ইলিশ জেলেদের-সাকিব মাঝি, ওমর আলী, ও রহিম গাজী, সাজাহান সরদার, প্রবীণ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামসহ অনেকের ধারণা- এবার আষাঢ়ে বজ্র-বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীতে মাছের দল বা জটলা ভাঙছে না।
কিন্তু ইলিশ গবেষক ড. আনিস বলছেন, ওনাদের এ ধারনাটা আংশিক সত্য।
আরও পড়ুন: ভোলায় ২ দিন নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা
ইলিশ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রবিবার মধ্যরাতে