চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে।
সদর উপজেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১৩ রশিয়া থেকে নারায়ণপুর ইউনিয়নের খলিফারচর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত দুই সপ্তাহের ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে- অর্ধশতাধিক বসতভিটা, মসজিদ ও আবাদি জমি।
আরও পড়ুন: বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী
হুমকির মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী তীরের অনেকে তাদের বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙন কবলিত এই এলাকার মানুষের একটাই দাবি ভাঙনরোধে দ্রুত নদীতে বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
জানা গেছে, পাশাপাশি অবস্থিত এই দুই উপজেলার দুটি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গত দুই-তিন বছর আগে পদ্মায় ভাঙন শুরু হয়।
ভাঙনে ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্ষা মৌসুম এলেই এসব চরাঞ্চলের মানুষ থাকেন নদী ভাঙন আতংকে।
নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন জানান, পদ্মায় ভাঙনটা প্রায় সারা বছরই থাকে। কখনো কম আবার একটু বেশি। এখন এই যে বর্ষা আসলো এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন: গোয়ালন্দে অসময়ে পদ্মায় ভাঙন
বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ১৩ রশিয়া থেকে তার ইউনিয়নের খলিফারচর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন চলছে। গত ১৫দিনে তার ইউনিয়নে ৭/৮টা মত বসত ভিটা, কিছু আবাদি জমি নদীতে গেছে।
ভাঙন আতংকে নারায়ণপুর আদর্শ কলেজ ও নারায়ণপুর দারুল হুদা আলিম মাদরাসা সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র, হাট, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক বাড়িঘর ও আবাদি জমি হুমকির মধ্যে রয়েছে।
বর্তমানে এসব এলাকা থেকে নদী ১ কিলোমিটার দূরেও নাই।
তিনি আরও জানান, ১নং ওয়ার্ডের সরদারপাড়া, বাঘপাড়া, ঘোসপাড়া, মন্ডলপাড়া, ৪ নং ওয়ার্ডের পান্নাপাড়া, চটকপাড়া সবই নদী থেকে হাফ থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে।
ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত ব্যবস্থা না নিলো একে একে সব পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।
এদিকে পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, দুই মাসের উপর থেকে দক্ষিণ পাঁকা তেরো রশিয়া এলাকায় একটু একটু করে ভাঙন চলছিলো। এখন পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু বাড়ি নদীতে নেমে গেছে।
আরও পড়ুন: পদ্মায় ভাঙন রোধে ১০৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
ভাঙন আতংকে আছে অনেকে। তাদের কেউ কেউ ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম জানান, বর্তমানে নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি মত বসতভিটা নদীতে নেমে গেছে। নদী পাড়ের মানুষ এখন ভাঙন আতংকে দিন পার করছে। কেউ কেউ ভাঙনের ভয়ে ঘরবাড়ি অন্য জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫০টি মত ঘরবড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, কয়েক বছর থেকে ওই এলাকা ভাঙছে। বর্তমানে নদীতে পানি বাড়ছে। এবারও অল্পদিন থেকে হালকা ভাঙন শুরু হয়েছে।
পাঁকা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাঁকা ও নারায়ণপুর ইউনিয়নের ভাঙন প্রতিরোধে কাজ করার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের করণীয়
তবে এখনো কাজ করার কোনো অনুমতি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। প্রকল্প অনুমোদন হলে ও অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলেই কাজ শুরু করা হবে।