বীজ সংগ্রহ করে চলতি মৌসুমে জেলার জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের বনখুর ও বড় তাজপুর গ্রামে কোনো গোপনীয়তা অবলম্বন না করেই ‘পোস্তদানা ফসল’ এর নামে প্রকাশ্যে প্রায় ১১ বিঘা জমিতে নিষিদ্ধ এই পপি চাষ করা হয়।
আরও পড়ুন:অস্ত্রসহ জয়পুরহাটে চরমপন্থী ‘কাদামাটি’ গ্রুপের ২ সদস্য আটক
বিষয়টি জানতে পেরে শনিবার রাতে র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. এম. মোহাইমেনুর রশিদের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল জেলার সদর উপজেলার পুরানাপৈলের বনখুর ও বড় তাজপুর এবং পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে পপি চাষ, পপি ফল বিপণন ও পপি চাষে অন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে। এছাড়া র্যাব সদস্যরা স্থানীয়দের সহায়তায় রবিবার জয়পুরহাটের সদর উপজেলার পুরানা পৈল ইউনিয়নের বনখুর ও বড় তাজপুর গ্রামের মাঠে চাষকৃত (উৎপাদিত) আনুমানিক ২১ লক্ষাধিক টাকার বিপুল পরিমাণ পপি গাছ ও পপি ফল উদ্ধার এবং ধ্বংস করেছে।
র্যাবের অভিযানে আটককৃতরা হলেন- জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের বনখুর গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ দাস (৬০), নইমুদ্দিন মন্ডল (৫৯), বড় তাজপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা (৬৫), পাঁচবিবি উপজেলার পূর্ব বালিঘাটা এলাকার নেপাল চন্দ্র দাস (৫২) ও বালিঘাটা বাজার এলাকার রিপন সর্দার ওরফে রবু (৩৭)।
আরও পড়ুন:জয়পুরহাটে বাস-ট্রেন সংঘর্ষে নিহত ১২
র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম. এম. মোহাইমেনুর রশিদ জানান, আটককৃতরা একে অপরের সাথে যোগসাজশে আফিমের মূল উপাদান পপি চাষ করে এর ফল অবৈধভাবে বাজারজাত করে আসছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন:জয়পুরহাটে সড়কে প্রাণ গেল ২ জনের
তিনি আরও জানান, আটক রাজেন্দ্রনাথ দাস ও নইমুদ্দিন মন্ডল দীর্ঘদিন যাবৎ গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে আফিমের মূল উপাদান পপি গাছের বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন ফসলের আড়ালে পপি চাষ করছিল এবং অধিক লাভের আশায় আশপাশের কৃষকদের পপি চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে আসছিল। এছাড়াও রাজেন্দ্রনাথ দাস ও নইমুদ্দিন মন্ডলের নিকট হতে তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত পপি ফল সংগ্রহ করে রিপন সর্দার গোপনে সেগুলো নেপাল চন্দ্র দাসের কাছে বিক্রি করত বলে স্বীকার করেছে।
রবিবার দিনভর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ওই এলাকার ক্ষেতে চাষকৃত বিপুল সংখ্যক পপি গাছ, ফুল ও ফলের নমুনা সংগ্রহ ও ধ্বংস করা হয়।
পুরানাপৈল ইউনিয়নের ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জয়পুরহাট সদর উপজেলার কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ইনছান আলী দাবি করেন, অনেকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা ক্ষতিকর মাদক জাতীয় এই ফসলটির চাষ করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ২/৩ বছর থেকে তারা বনখুর ও বড় তাজপুর গ্রামের মাঠে সাদা রঙের ফুল ধরা এ পপির চাষ হতে দেখেছেন।
স্থানীয়রা শুনেছেন, এটি অনেক লাভজনক ফসল। এর ফল প্রতি কেজি ৭০০ টাকা থেকে হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
এ ব্যাপারে পুরানপৈল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য (মেম্বার) রফিকুল ইসলাম বলেন, যারা এতদিন ‘পোস্তদানা ফসল’ এর নামে পপি চাষ করত তারা গোপনে স্মাগলারদের (চোরাচালানিদের) মাধ্যমে অবৈধভাবে ভারত থেকে বীজ আনন। গোপনে উৎপাদিত পপি ফল ওই স্মাগলারদের কাছেই বিক্রি করত। আমরা প্রকাশ্যে কোথাও এর বেচাকেনা দেখিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স, ম, মেফতহুল বারি জানান, পুরানাপৈল এলাকায় পপি চাষের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের গোচরীভূত হওয়ার পর এক জরুরি সভায় জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দেখার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী, শুক্রবার বগুড়া থেকে শহীদুল ইসলাম নামে একজন কৃষি বিশেষজ্ঞকে আনিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন চন্দ্র রায়সহ ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে চাষ করা ক্ষেতের ফসলটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এটি সত্যি সত্যি ক্ষতিকর পপি কিনা তা নিশ্চিত হন তারা। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে জানালে তিনি দ্রুত জয়পুরহাট সদরের পুরানাপৈল ইউনিয়নের উল্লেখিত গ্রামে অবৈধভাবে চাষ করা সমস্ত ক্ষেতের পপির গাছ ধ্বংস করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার আগেই র্যাব সদস্যরা নিজস্ব উদ্যোগে রবিবার স্থানীয়দের সহায়তায় উল্লেখিত দুই গ্রামের মাঠের বিস্তীর্ণ পপির ক্ষেত ধ্বংস করে।