আরও পড়ুন: বগুড়ায় করোনায় কৃষি কর্মকর্তাসহ আরও ৩ জনের মৃত্যু
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের ৬৪টি জেলায় ৫০ একর করে জমিতে অধিক ফলনশীল সুবর্ণ-৩ হাইব্রিড বোরো ধানের চাষ করতে সমলয়ে ব্লক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ব্লক প্রদর্শনীর জন্য জেলা প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ এলাকা ব্লক প্রদর্শনীর এলাকা নির্ধারণ করা হয়। এতে ৫০ একর জমির জন্য বীজতলা তৈরি করতে সাড়ে চার হাজার ট্রেতে চারা করার জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়। ভালো চারা পেতে ১০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেতে বীজ রোপনের কথা বলা হয়। এতে করে সাড়ে চার হাজার ট্রের মূল্য হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিম্নমানের ২৫শ ট্রেতে বীজতলা তৈরি করেন। এতে করে অতিরিক্ত ট্রের খরচ আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠে।
আরও পড়ুন: অনিয়ম-দুর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণ প্রকল্প
এই বীজের উৎপাদিত চারা দিয়ে ১৬৬ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৬০ বিঘা জমি কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে রোপন সম্ভব হয়নি। বাকি ৬০ বিঘা জমি নিজে চারা কিনে রোপন করতে কৃষকদের নির্দেশ দেন কৃষি কর্মকর্তা। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষক চারা কিনে রোপন বাবদ খরচ পাচ্ছেন মাত্র ৯১০ টাকা। অথচ কৃষকের খরচ হয়েছে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৭০০ টাকা। সবকিছু দেয়ার কথা থাকলেও জমিতে চাষ ও পানি দেয়ার খরচও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কৃষকের উপর। কৃষি অফিস শুধু বীজতলা তৈরি করে চারা রোপন, সার ও কেটে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, সরকার কৃষি ও কৃষকদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিলেও অনেক কিছু থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান ও মোস্তফা মিয়াসহ একাধিক কৃষক জানান, সব খরচ কৃষি অফিস বহন করার কথা বলে জমি নেয় কিন্তু জমির চাষ ও পানির খরচ কৃষককেই বহন করতে হচ্ছে। আবার ৬০ বিঘা জমির রোপন খরচও কৃষককে বহন করতে হচ্ছে। কৃষি অফিস মেশিন লাগালে ৯০০ টাকা খরচের মধ্যে লাগানো সম্ভব। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে লাগালে খরচ হয় প্রায় ১৭০০ টাকা। কৃষকরা বলছে বেশিরভাগ খরচই যদি তাদের বহন করতে হয় তাহলে সরকারের দেয়া ১৪ লাখ টাকা খরচ কোথায় করা হবে?
আরও পড়ুন: দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের ২ ধাপ অবনতি
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কম ট্রেতে বীজ রোপনসহ সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। অনিয়মের বিষয়ে সরকারকে জবাব দেয়া ও বোঝানোর ক্ষমতা আমার আছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম জানান, প্রকল্পে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেভাবেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে কাজ করতে হবে। এখানে নিয়মের কোনব্যতিক্রম হলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: টিআইবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রবিউল হক মজুমদার জানান, সমলয় হাইব্রিড চাষ প্রকল্পে নিয়ম বহির্ভুত কোনো নির্দেশনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। যদি প্রকল্পে নির্দেশনার বাইরে কিছু হয়ে থাকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।