মৌসুমের শুরুতেই ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীতে ফুলের আশানুরূপ দাম পেয়ে খুশি ফুল চাষিরা।
ফুল খেতগুলোকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন তারা। প্রতিটি ফুল শেড এক একটি স্টলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। গদখালীর পানিসারা হাড়িয়া ফুল মোড়ের খেতগুলো আরও দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে।
এদিকে এক সপ্তাহ ধরে ধাপে ধাপে ফুলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়েছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ বিভিন্ন ফুল।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যাপ্ত মুকুল আসলেও পরিচর্যা খরচ বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছেন আম চাষিরা
ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, মূল্য চড়া হলেও চাহিদা থাকায় তারাও ভালো ব্যবসা করছেন।
স্থানীয় ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে মৌসুমের সামনের দিনগুলোতে প্রত্যাশিত ফুল বিক্রি করে তারা বেশ লাভবান হবেন।
দেশে ফুলের উৎপাদনের মূল অঞ্চল যশোরের গদখালীসহ আশপাশের এলাকা। মূলত ডিসেম্বর মাসের বিজয় দিবস থেকে এখানকার ফুলের মৌসুম শুরু হয়।
এসব কারণে গত কয়েক মাস ধরে কৃষকদের পরিশ্রমে যশোরের গদখালীর মাঠে মাঠে ফুটেছে গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল।
বিজয় দিবসকে সামনে রেখে মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা।
বৃহস্পতিবার ভোরে গদখালীর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গোলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি ৮ থেকে ১২ টাকা, গ্লাডিওলাস রঙ ভেদে ১২ থেকে ২৮ টাকা, জারবেরা ১০ থেকে ১৬ টাকা, রজনীগন্ধা ৫ টাকা, ১০০ চন্দ্রমল্লিকা ৫০০ টাকা, ১ হাজার হলুদ গাঁদা ৮০০ ও বাসন্তী কালারের গাঁদা ফুল ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাষিদের দাবি হরতাল অবরোধে সমস্যা না হলে আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের বাজার নিয়ে আশাবাদী তারা।
গদখালীর ফুল চাষি শাহাজাহান আলী বলেন, করোনা, আম্পানসহ নানা কারণে গত কয়েক বছর ধরে ফুলের উৎপাদন ও দাম নিয়ে হতাশায় দিন কাটিয়েছেন। মাঝে মধ্যে লাভ হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।
এবছরও আমরা ভালো লাভের আশা করছিলাম। কিন্তু ফুল উৎপাদনের উপযুক্ত সময়ে এসে হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা কমে যায়। তবে শেষমেষ বিজয় দিবসের বাজারে এসে ফুলের ভালো দাম পেয়ে বেশ খুশি আমরা।
অপর ফুল চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, সার-কীটনাশক, সেচ, শ্রম খরচসহ আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই ফুল চাষ খুব দূরুহ হয়ে পড়েছে। তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে আমাদের শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। তবে আশা জাগিয়েছে বছরের প্রথম ফুলের বাজার পেয়ে। আশা করছি রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হয়ে ফুলের বাজার আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এবছর মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের দাম চড়া হওয়ায় বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আমরা অনেকটা অনিশ্চয়তায় ছিলাম বিজয় দিবসকে সামনে রেখে ভালো দাম পাবো কি না। কিন্তু সব শঙ্কা কেটে মৌসুমের প্রথম বাজারে ফুলের ভালো দাম পাচ্ছেন যশোরের গদখালীর ফুল চাষিরা।
তিনি জানান, চাহিদা থাকায় আসন্ন বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষ, পহেলা ফালগুনেও বাজার নিয়ে আশাবাদী। এভাবে দাম পেলে এ বছর লাভবান হতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ বলেন, যশোরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়েছে। এবছর ফুল চাষের জন্য আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে।
ফুল চাষে কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।