গাইবান্ধার পাটচাষিদের অবস্থা এখন অনেকটাই তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন পানির জন্য।
পানির অভাবে জাগ (পানিতে ডুবিয়ে পচানো) দিতে পারছেন না কেটে রাখা পাট। বাধ্য হয়ে জমিতে স্তূপ করে রেখে অপেক্ষা করছেন পানির জন্য। আবার কেউ কেউ পানি নেই বলে না পাট কাটছেন না।
পাটচাষি ও মোল্লার চরের ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সরকার জানান, তোষা পাটের ব্যাপক চাষ হয় গাইবান্ধার ১৬৫টি চরাঞ্চলে। কিন্তু এবছর অনাবৃষ্টি, খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে বিপাকে পড়েছে পাটচাষিরা।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, পলাশবাড়ি, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা সদর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা এবং নিচু জলাশয় শুকিয়ে গেছে। তাই কারণে এই ভরা মৌসুমে পাট পচানো নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
গুনভরি এলাকার পাটচাষি মহিউদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে স্তূপ করে রেখেছি অনেকদিন ধরে। দিনের পর দিন অপেক্ষা করছি; কিন্তু বন্যা বা বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় জমিতে স্তুপ করে রাখা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। মূল্যবান এই পাট পচানোর ব্যবস্থা করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে এলাকার নিচু জলাশয়ে ও পুকুরে সেচ দিয়ে পাট পচানোর ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু জলাশয় ও পুকুরে সেচ দেওয়া পানিও থাকছে না। দু-তিন দিনের মধ্যেই সেই পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে।’
গাইবান্ধা জেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে সাঘাটা উপজেলায় ৩ হাজার ২ হেক্টর, গাইবান্ধা সদরে ৯৪৫, সাদুল্লাপুরে ৪৮০, গোবিন্দগঞ্জে ৬৪১, ফুলছড়ি উপজেলায় ৪ হাজার ৩৯০, পলাশবাড়িতে ২৯০ এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ৪ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ভরা মৌসুম হওয়ায় ইতোমধ্যে পাট কাটা শুরু হয়েছে।
পাট পচানোর জন্য ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮ থেকে ৯ মণ পাট উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়।
চর কাপাসিয়া ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা রেজা মেম্বার জানান, তিনি ২০ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। বাধ্য হয়ে কিছু পাট তিস্তা নদীতে পচাতে দিয়েছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারী ইউনিয়নের শাহিন মিয়া জানান, তার বাড়ির আশেপাশের পুকুরে পানি নেই। ১০দিন হল পাট কেটে জমিতে স্তুপ করে রেখেছেন। পানি না থাকায় পচানোর জন্য জাগ দিতে পারছেন না। ইতোমধ্যে জমিতে তার পাট শুকিয়ে গেছে। সেচ দিয়ে পানি ভর্তি করে পচানোর ব্যবস্থা করা হলেও পানি দিতে হচ্ছে প্রতিদিন। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, তারপরও পাটের রং নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।