ফেনীর একটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বজনরা আদনান আহমেদ নামে অভিযুক্ত চিকিৎসক ও অ্যানেস্থেসিয়ার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সাইফুল ইসলামকে লাশের সঙ্গে অপারেশান থিয়েটার রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার সন্ধ্যায় শহরের কাঁচা তরকারির আড়তের সামনে অবস্থিত আল মদিনা হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
ওইদিন রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন টিপুর সমঝোতায় লাশ হস্তান্তর করা হয়।
মৃত ওসমান গনি (৫) ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
আরও পড়ুন: চিকিৎসকের অবহেলায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগ
এছাড়া, রবিবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এবং আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা করায় মেডিকেল প্রাকটিস ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিনেন্স ১৯৮২ মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন- জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুভল চাকমা। এসময় জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) আশিকুদ্দোলা, ফেনী সদর উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে ছিলেন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) যোবায়ের ইবনে খায়ের। ফেনী মডেল থানা–পুলিশ অভিযানে সহযোগিতা করে।
শিশুটির মা আসমা খাতুন বলেন, ‘আমার জ্যান্ত ছেলের কিডনি কেটে ডাক্তার মেরে ফেলেছে। আমার সন্তান চাই। আর কিছু চাই না, আমার সন্তানকে বুকে ফিরিয়ে দিতে হবে।’
ওসমানের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হার্নিয়া রোগের অপারেশন করার জন্য শনিবার বিকাল ৪টায় আমি আমার ছেলেকে নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি করি। কথা ছিল সন্ধ্যার পর অপারেশন হবে। কিন্তু বিকাল সাড়ে ৪টায় ডাক্তার এসে ইনজেকশন পুশ করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই ছেলের মৃত্যুর খবর আসে। আমরা এর বিচার চাই। দোষীদের শাস্তি চাই।’
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মারা যাওয়া রোগী আমাদের আত্মীয় হয়। অপারেশন শেষ হওয়ার পর তার জ্ঞান ফিরেনি। অপারেশন থিয়েটারে তার সার্জারিতে কোনো ভুল হয়েছে কিনা সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।’
থিয়েটারে অ্যানেস্থেসিয়া দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। পরে তার জ্ঞান ফিরে না আসায় আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। এক পর্যায়ে দেখি সে বেঁচে নেই। সম্ভবত সে হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।’
থিয়েটারে সার্জারি চিকিৎসকের দায়িত্বে থাকা আদনান আহমেদ বলেন, ‘নিয়ম মোতাবেক অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আমি তার অপারেশন শেষ করি। রোগীর জ্ঞান ফিরে আসা না আসাটা মূলত অ্যানেস্থেসিয়ার ওপর নির্ভর করে।’
বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে তদন্ত হলে মূল সমস্যা বের হয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) (তদন্ত) মাহফুজুর রহমান বলেন, হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনদের সঙ্গে সমস্যার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. মো. শিহাব উদ্দিন জানান, ভুল অপারেশানে শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এবং আইন লঙ্ঘন করে পরিচালনা করায় মেডিকেল প্র্যাকটিস ও প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেশন) অর্ডিনেন্স ১৯৮২ মোতাবেক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।