যশোর শহরের রেলরোডে ফুড গোডাউনের বিপরীতে অবস্থিত বেসরকারি যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় ও পূর্নবাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন মাহফুজুর রহমান অসুস্থ হয়ে মারা যায়নি। তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ ১৪ জন মিলে পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
রবিবার দুপুরে নিহত মাহাফুজুর রহমানের পিতা কোতয়ায়ী থানায় মামলা করেন।
মামলায় ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাসুদ করিম, ও আশরাফুল কবিরসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন: সাভারে পোশাক শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চাঁচড়া ফাড়ির আইসি রকিবুজ্জামান জানান, ঘটনা জানতে পেরে যশোর কোতয়ালী থানার পুলিশ শনিবার রাত থেকে বিভিন্ন টিমে বিভক্ত হয়ে অভিযান চালায়। রবিবার ভোর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করা হয় কেন্দ্রের পরিচালকসহ ১৪ জনকে।
মামলার আসামিরা হলেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বারান্দী মোল্লাপাড়া এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে মাসুদ করিম, বারান্দীপাড়া বটতলা এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে আশরাফুল কবির, চৌগাছা উপজেলার বিশ্বাসপাড়া গ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে রিয়াদ, ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের সাবদার রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান, একই গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে আরিফুজ্জামান, শহরের কাজীপাড়া মসজিদের পাশের বাসিন্দা কামরুজ্জামানের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান, মনিহার নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার আব্দুর রশিদ মিয়াজীর ছেলে রেজাউল করিম রানা, আরবপুর বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে অহিদুল ইসলাম, হুসতলা বকচর এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে আল শাহরিয়ার রোকন, বেনাপোল পোর্ট থানার শাখারীপোতা গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন, অভয়নগর উপজেলার বুইকারা গ্রামের আসর আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার এস এম জি মুক্তাদিরের ছেলে এস এস সাগর আজিজ, শেখহাটি হাইকোর্ট মোড় এলাকার মৃত ফজর আলীর ছেলে নুর ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার বামখালী গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান ওরফে সাগর।
আরও পড়ুন: কিশোরগঞ্জ কারাগারে বন্দিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
নিহতের বাবা মনিরুজ্জামান মামলায় উল্লেখ করেন, তার ছেলে মাহাফুজুর রহমান (১৯) মাদকাসক্ত হওয়ায় ২৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে যশোর মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করেন। তারপর থেকে মাহাফুজুর সেখানেই ছিলেন। ২২ মে দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক মাসুদ করিম তাকে মোবাইলে জানায় যে মাহফুজ অসুস্থ, তিনি যেন দ্রুত যশোর আসেন। এ খবর শুনে মনিরুজ্জামানসহ তার এলাকার সাইদুর রহমান ও আক্তার হোসেন যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিছু সময় পর পথিমধ্যে পরিচালক তাকে আবারও মোবাইল করে জানায়, তিনি যেন শক্ত হন তার ছেলে মারা গেছে। লাশ যশোর সদর হাসপাতালে রয়েছে। বাদী মনিরুজ্জামান বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে এসে ছেলে মাহফুজুর রহমানের লাশ দেখতে পান।
মামলায় আরও উল্লেখ করেন, ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে বাদীর সন্দেহ হওয়ায় ছেলের শরীর ভাল ভাবে পরীক্ষা করেন বাদী। মাহফুজুরের শরীরের ডান হাতের কবজির উপর কামড়ানোর দাগ, পিঠের ডান ও বাম পাশে কালচে থেথলানো দাগ, বাম কাঁধের উপরে থেতলোনো দাগসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ও অন্ডকোষ ফোলা দেখতে পান। পরে বাদী মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ সদস্যরা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে নিরাময় কেন্দ্রের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ দেখেন। ভিডিও ফুটেজ দেখে তারা জানতে পারেন যে মাহফুজুরকে হত্যা করা হয়েছে।
বাদী মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ সদস্যরা মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, ২২ মে রাত সাড়ে ১২ টায় ঘুমাতে যায় মাহফুজুর রহমান। পরে ভোর ৫টা ২০ মিনিটে মাহফুজুর রহমান প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাহিরে যান। বাহিরে যাওয়ার পরে নিরাময় কেন্দ্রের চিকিৎসাধীন কয়েকজন, পরিচালক মাসুদ করিম ও আশরাফুল কবিরের নির্দেশে মাহফুজুরকে এলোপাতাড়ি ভাবে মারপিট করে গুরুতর জখম করে ও নাকে মুখে অতিমাত্রায় পানি ঢালে। আসামিদের নির্যাতনে মাহফুজুর অচেতন হয়ে পড়লে আসামিরা তাকে ভ্যানে করে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের বারান্দায় রেখে পালিয়ে যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাহফুজুরকে অচেতন অবস্থায় পেয়ে চিকিৎসার জন্য ভিতরে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক ডা. তন্ময় বিশ্বাস দুপুর ১ টা ৫০ মিনিটে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি হিসেবে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার ভোর ৫টা ২০ মিনিট থেকে একই দিন দুপুর ১টা ৫০ মিনিটি পর্যন্ত যেকোনো সময় শারীরিকভাবে নির্যাতন করে মাহফুজকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।