পুলিশের চাকরিচ্যূত সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে এবার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মামলা দায়ের করেছে মিতুর পরিবার।
বুধবার দুপুরে নিহত মিতুর বাবা বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন সিএমপির পাচঁলাইশ থানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাসেম ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, নিহত মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন মিতু হত্যার মামলা করেছেন। এতে বাবুল আক্তারসহ ৮ জনকে আসামি দেখানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দল বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের হেফাজতে নেয়ার কথা জানান। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের পর বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানায় পিবিআই’র একটি সূত্র।
আরও পড়ুন: মিতু হত্যা: বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়েছে পিবিআই
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার বাদী ছিলেন স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। তদন্তে তার বিরুদ্ধে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মিতু হত্যার আগের মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে জমা দিয়েছে পিবিআই। হত্যা মামলায় স্বামী বাবুল আক্তারকে আসামি করার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার আদালতে তোলা হবে।
এদিকে থানায় মামলা করতে আসা বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, যে কারণে বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে সেই কারণে আমিও চট্টগ্রামে। আমার মেয়ের খুনের সঙ্গে বাবুল আক্তার যে জড়িত সেটা আগেই আমি উত্থাপন করেছিলাম। এবার তার বিরুদ্ধে মামলা করতে এসেছি।
মঙ্গলবার রাতে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নেয়ার কথা জানায় পিবিআই। এর আগে দুপুরে চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমাসহ পিবিআইয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ের কাছে ওআর নিজাম রোডে নির্মমভাবে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ছুরিকাঘাত ও গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাচঁলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কারণ তার স্বামী বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে এএসপি থাকাকালে জঙ্গি বিরোধী অপারেশনে পুলিশের প্রথম সারির কর্মকর্তাদের একজন ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাবুল আক্তার ও মিতুর পরকীয়ার বিষয়টিও আলোচিত হয় গণমাধ্যমে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যও নিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা।
হত্যাকাণ্ডের বছরখানেক পর থেকেই মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর একটি মাজারের খাদেম আবু নছর ওরফে গুন্নু ও শাহজামান ওরফে রবিন নামের আরও এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তারা জামিনে বেরিয়ে আসেন। হত্যকাণ্ডের ২০ দিন পর তদন্ত ভিন্নখাতে মোড় নেয়।
২০১৬ সালের ২৪ জুন মধ্যরাতে ঢাকার বনশ্রী এলাকার শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রায় ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। পরে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর নানা গুঞ্জন ডালপালা ছড়ায়।
এসময় পুলিশ জানায়, বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেছেন বাবুল আক্তার।
তবে বাবুল আক্তারের দাবি ছিল, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন তিনি। নানা নাটকীয়তা শেষে ৬ সেপ্টেম্বর বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: পরকীয়ার জেরে শিশু হত্যা: মা ও তার প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড
মিতু হত্যার ২১ দিন পর ২৬ জুন গ্রেপ্তার করা হয় ওয়াসিম ও আনোয়ারকে। আদালতে জবানবন্দি দেন তারা। এরপর বেরিয়ে আসে হত্যায় জড়িতদের তথ্য। জবানবন্দিতে তারা জানান মুছার নেতৃত্বে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান ও মো. কালু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।
আরও পড়ুন: মেহেরপুরে গৃহবধূকে হত্যার দায়ে স্বামী ও সতীনের মৃত্যুদণ্ড
হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। অস্ত্র সরবরাহ করেন এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা।
তবে কী কারণে, কার নির্দেশে তারা হত্যায় অংশ নিয়েছেন তা নিয়ে কোন তথ্য দেননি। একই বছরের ৪ জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নবী ও রাশেদ। মুছা ও কালুকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এক পর্যায়ে মুছাকে ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ।
২০১৬ সালের ২২ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ মুছাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার। এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে পুলিশ।