দীর্ঘ প্রায় পাঁচ যুগ পর সিরাজগঞ্জ শহরের কাটাখালিতে যমুনার পানি প্রবেশ করায় হারানো যৌবন এখন ফিরে পাচ্ছে কাটাখালি। বিকাল হলেই এখন অনেকেই ভিড় জমায় কাটাখালির চিত্র দেখতে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী (হেড কোয়ার্টার) জাকির হোসেন জানান, বিপুল অংকের টাকা ব্যয়ে দেশের ৬৪ জেলার ছোট নদী-খাল-বিল পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলা শহরের কাটাখালি পুনঃখনন ও সংস্কারের কাজও এগিয়ে চলেছে। কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে যমুনা নদীর পানি ইছামতি ও ফুলজোড় নদীতে গড়েছে এবং বাঐতারা স্লুইচগেটে বন্যার পানি কাটাখালিতে প্রবেশ করছে। এ পানি প্রবেশ করায় কাটাখালির ময়লা আবর্জনাও চলে যাচ্ছে যমুনায়।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য এ খালটি খনন করে যমুনা নদীর সাথে সংযোগ করা হয়। সিরাজগঞ্জ শহরের মাঝখানে কাটাখালির উপর ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮৮২ সালে নির্মিত হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ। ১৮০ ফুট লম্বা আর ১৬ ফুট চওড়া এ ব্রীজটির অন্যতম বৈশিষ্ট হলো এটির কোন পিলার (খুঁটি) নেই। স্টুয়ার্ট হার্টল্যান্ড নামের ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারের তৈরি এ পিলারবিহীন ব্রীজটির নামকরণ করা হয় ইলিয়ট ব্রীজ। ১৯৬২ সাল থেকে এ খালটির বাঐতারা প্রান্তের স্লুইচগেটের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে ময়লা-আবর্জনায় পরিণত হয় শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এ খাল। এ কাটাখালি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও সফলতায় আসেনি।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন, অর্ধশত ঘরবাড়ি বিলীন
অবশেষে ২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই প্রকল্পের আওতায় কাটাখালির পুনরায় খনন কাজ শুরু করে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ কিলোমিটার এ খাল পুনরায় খনন শুরু করা হয়েছে। যমুনা নদীর উৎস মুখ সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাঐতারা স্লুইচগেট থেকে শহরের মিরপুর, রেলওয়ে কলোনী বড়বাজার হয়ে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের পাশ দিয়ে জানপুর, বাহিরগোলা এবং চন্দ্রকোণা হয়ে কালিঞ্জার ভেতর দিয়ে ইছামতি নদী পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এ খাল খনন কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কাটাখালির সিংহভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, কাটাখালিতে যমুনার পানি প্রবেশ করায় শহরের ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ কমে যাচ্ছে এবং এ স্বচ্ছ পানিতে বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ ছাড়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
এছাড়া কাটাখালির উভয়পাড় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।