গ্রেপ্তার বাবুল দাস (২৭) দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের শিব দাসের ছেলে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক চার মাস আগে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদাড়া গ্রামের নিরাপদ দাসের মেয়ে মিতালী দাসের (১৯) সাথে দিঘলিয়া উপজেলার বাবুল দাসের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই মিতালীর শ্বশুর, শ্বাশুড়ি এবং বড় ননদের স্বামী রবিন দাস যৌতুকের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে।
এক পর্যায়ে মিল শ্রমিক বাবুল দাস উচ্চপদে চাকরিতে পাঁচ লাখ টাকা লাগবে বলে জানায় মিতালী দাসকে। এর ৩ লাখ টাকা মিতালীর বাবার কাছ থেকে এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। মিতালীর বাবা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্বশুর বাড়িতে তার সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে এবং বিভিন্ন হুমকি প্রদান করে। গত ২মে রাতে দাঁতে ব্যাথায় অসুস্থ মিতালীকে কৌশলে তার শ্বাশুড়িকে দিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে ঘুমে আচ্ছন্ন অচেতন অবস্থায় তার স্তন, তলপেট ও গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মশার কয়েলের আগুনে ছ্যাঁকা দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরদিন খবর পেয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মিতালীর পিতা ও দাদার সহায়তায় উদ্ধার করে সন্ধ্যায় প্রথমে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে ওসিসিতে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, বর্তমানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল রয়েছে এবং তার বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে নানা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সহযোগিতায় গত ৫ জুলাই দিঘলিয়া থানায় মিতালী দাস নিজে বাদী হয়ে তার স্বামীসহ মোট ৪জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। পরে সোমবার পুলিশ মিতালীর স্বামী বাবুল দাসকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যরা পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে মিতালী দাস বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকার জন্য আর লকডাউনের জন্য মামলা করতে একটু দেরি হয়ে গেছে। যৌতুকের জন্য ওরা আমার সাথে যে আচরণ করেছে আর আমি যেমন নির্যাতনের শিকার হয়েছি এমন যেন আর না হয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
বাদীর বাবা নিরাপদ দাস বলেন, ‘আমার মেয়েকে ওরা যে নির্যাতন করেছে, কোনো মানুষ মানুষকে এভাবে নির্যাতন করতে পারে, আমার জানা ছিল না। আমি চাই আমার মেয়েকে নির্যাতনকারীরে শাস্তি হোক। আসামিরা যেন কঠিন শাস্তি পায়।’
জাতীয় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার আঞ্চলিক সহকারি পরিচালক জেসমিন সুলতানা বলেন, ‘মামলাটি যে ধারায় নেয়ার কথা ওসি সে ধারায় মামলা নিচ্ছিল না। বিষয়টি আমাদের জানানোর পর অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদ এবং স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারদের সহযোগিতায় আমরা ব্যবস্থা করেছি এবং মামলা করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর হোসেন জানান, মামলার প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে কোর্টে চালান করা হয়েছে। ঘটনার সাথে অন্য আসামিদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।