ভুক্তভোগী রাবেয়া ওই ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের জবরদখল গ্রামের গিয়াস উদ্দিন সরদারের মেয়ে।
এদিকে, হাসপাতালে ভর্তির তিনদিন অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত রাবেয়ার স্বামী কিংবা ওই পরিবারের কোনো সদস্য তাকে দেখতে আসেনি এবং কোনো খোঁজ খবরও নেয়নি বলে রাবেয়ার পরিবারের অভিযোগ।
আরও পড়ুন: যৌতুকের দাবি: মাগুরায় স্বামীর লাঠির আঘাতে স্ত্রীর মৃত্যু
রাবেয়া জানায়, ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর কাঁচিকাটা ইউনিয়ননের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরজিংকিং গ্রামের আজিজুল ব্যাপারীর ছেলে বিল্লাল ব্যাপারীর (২৭) সঙ্গে পারিবারিকভাবে তার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের নুসরাত নামে দুই বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের সময় লেনদেন কোনো কথা ছিলো না। কিন্তু বিয়ের ৬মাস পার হতে না হতেই রাবেয়ার পরিবারের কাছে যৌতুক হিসাবে মোটরসাইকেলের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন বিল্লাল। সংসার টিকাতে রাবেয়ার পরিবার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কিনে দেয়। এছাড়াও সম্প্রতি কাঁচিকাটা জিংকিং বাজারে সারের ব্যবসা করবে বলে তিন লাখ টাকা দাবি করে। সেই টাকাটা দেয়া হয়।
সর্বশেষ, গত ৩০ ডিসেম্বর শাশুড়ি উম্মে কুলসুম (৬০), ভাসুর দুদু মিয়া বেপারী (৩৫), আমির হোসেন বেপারী (৪০) ও ননদ আকলিমা বেগম (৩২) আবারও বড়ি থেকে টাকা নিয়ে আসতে বলে জানায় রাবেয়া।
আরও পড়ুন: যৌতুকের জন্য নির্যাতন, বিবাহ বার্ষিকীতেই মৃত্যু গৃহবধূর
রাবেয়ার ভাষ্য, গত ৩ জানুয়ারি তার স্বামী, শ্বাশুড়ী, ভাসুর ও ননদ কোনো কারণ ছাড়াই তিন লাখ টাকার কোনো ব্যবস্থা না করার অপরাধে তাকে এলোপাতারিভাবে মারপিট করতে থাকে। মারপিটের এক পর্যায়ে রাবেয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
পরেরদিন খবর পেয়ে রাবেয়ার বড় ভাই আল আমিন সরদার, এলাকার আলম মোল্লা তাকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। এরপর থেকে শরীরে যৌতুকের জন্য মারপিটের ক্ষত-বিক্ষত চিহ্ন নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে আছে রাবেয়া।
আরও পড়ুন: যৌতুক না দেয়ায় স্ত্রীর শরীরে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা!
রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমি সংসার করবো কিন্তু বিল্লালের পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের কারণে আমাকে অন্যায়ভাবে যে মারপিট করেছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই। আর আমার বাবা গরীব। আমার বাবা যৌতুকের এতোগুলো টাকা কোথায় পাবে? তারা যদি সময় দিতো তাহলে হয়তো বা আমার বাবা একটু চেষ্টা করতো।’
রাবেয়ার বড় ভাই আল আমিন সরদার বলেন, ‘আমারা অসহায় মানুষ। আমরা দিনমজুরের কাজ করে খাই। বিয়ের সময় যদি তারা আমাদের যৌতুকের কথা বলতো তাহলে আমরা সেভাবে আমার বোনকে বিয়ে দিতাম। বিয়ের সময় লেনদেনের কোনো কথা ছিলো না। বোনের সংসার টিকাতে বাড়ি থেকে দুইবারে সাড়ে ৫ লাখ দেই বিল্লালকে। আবার তিন লাখ চায়।’
আরও পড়ুন: যৌতুকের একটি নাকফুলের জন্য গৃহবধূকে হত্যা!
বিষয়টি সখিপুর থানার পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানেয়ছেন উল্লেখ করে রাবেয়ার বড়ভাই বলেন, ‘আজ (বুধবার) মামলা করবো। টাকার জন্য আমার বোনকে যেভাবে তারা মারপিট করেছে, আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে রাবেয়ার স্বামী বিল্লাল ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি সকালে আমার মেয়ে নুসরাতকে সামান্য বিষয় নিয়ে মারধর করে স্ত্রী রাবেয়া। আমি ও আমার মা প্রতিবাদ করলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। মাকে মারধর করে। তাই আমি লাঠি দিয়ে কয়েকটা বারি দেই, থাপ্পড়ও দেই। পরে সেদিন রাতে ঘুমের চোখে আমার মাথায় কাঠ দিয়ে আঘাত করে রাবেয়া। আমার মাথা ফেটে যায়। আমি যৌতুক চাইনি।’
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাকে ভুক্তভোগী পরিবার এ বিষয় কিছু জানায়নি। এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেননি। লিখিতভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’