কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রামসিং বাইশের পাড় গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
সন্তানের পিতৃ পরিচয় দাবি করা নারী লায়লা বেগম জানান, তার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ধামর গ্রামে। পিতা নজরুল ইসলাম। রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের রামসিং বাইশের পাড় এলাকার মৃত নরেন্দ্র নাথ মন্ডলের ছেলে শ্রী পরেশ চন্দ্র মন্ডলের সাথে পরিচয় হয় তার। সেসময় তাকে বলেন, সে ব্র্যাকে চাকরি করেন। তাদের বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুজনের ভিন্ন ধর্ম। পরে পরেশ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। কোর্ট এফিড ডেফিটেরর মাধ্যমে তার নাম হয় মো. আব্দুল হামিদ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। তাদের সংসার জীবনে ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর একটি ছেলে সন্তান এবং ২০০৭ সালের ৫ অক্টোবর একটি কন্যা সন্তান হয়। পরেশ চন্দ্র মন্ডল ওরফে আব্দুল হামিদ ২০০৮ সালে বদলি জনিত কথা বলে কুমিল্লা চলে যান। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল হামিদ এর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। সন্তানদের তিনি চরম বিপাকে পড়েন। স্বামীর ফিরে না আসায় গাজীপুর সদর উপজেলার রাতুল গলীর নুর ভিলায় পিতা-মাতার কাছে আশ্রয় নেন তিনি। ব্যবসায়িক কাজের জন্য তার বাবা-মা সেখানেই থাকেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে দুটি সন্তানকে নিয়ে তিনি এখানেই রয়েছেন। কয়েক মাস আগে তার পিতা নজরুল ইসলাম মারা যান। দুটি সন্তান ও বৃদ্ধ মাকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে। স্বামী বদলির সময় কাগজপত্র নিয়ে চলে যাওয়ায়, স্বামীর স্থায়ী ঠিকানার খোঁজ পাননি তিনি। আকস্মিকভাবে তার স্বামী পরেশ চন্দ্র মন্ডল ওরফে আব্দুল হামিদের এইচএসসি পাশের মার্কশীট খুঁজে পান লায়লা বেগম। এরই সূত্র ধরে গাজীপুর থেকে সন্তানদের নিয়ে সোমবার সকালে পরেশ চন্দ্র মন্ডল ওরফে আব্দুল হামিদের বাড়িতে আসেন। তাদের পরিচয় পাওয়ার পরপরই স্বামীর পরিবারের লোকজন বাড়িতে তালা লাগিয়ে সটকে পড়েন।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে ধরলা ব্রিজের নিচ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার
লায়লা বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আমার সন্তানদের পিতৃ পরিচয় দিতে পারছি না। তাই আমার স্বামী না আসা পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে অনশন চালিয়ে যাব।’
লায়লা বেগমের বড় সন্তান মেহেদী হাসান রিপন (১৬) বলেন, ‘আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন বাবার ঠিকানা পেয়েছি। আমরা আমাদের বাবার পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাই।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে সম্ভাবনা জাগাচ্ছে ব্রকলি চাষ
ছোট মেয়ে নুশরাত জাহান ইলমা (১৪) বলেন, ‘আমরা জন্মের পর থেকেই বাবাকে দেখি নাই। আজ মা ও আমরা বাবার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছি, তাই বাবাকে না দেখা পর্যন্ত এখান থেকে ফিরব না। বাবা যদি না আসে এবং আমাদের পিতৃ পরিচয় না দেয় তাহলে আমার এখানেই আত্মহত্যা করব।’
নাজিমখাঁন ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার আজিজার রহমান জানান, শ্রী পরেশ চন্দ্র মন্ডল ২০০১ সালে একটি বিয়ে করে তাকে ডিভোর্স দেয়। এরপর কোথায় যায় জানি না। আজ জানলাম সে মুসলিম হয়ে বিয়ে করেছে। আবার ২০০৯ সালে রংপুর গঙ্গাচড়া এলাকায় শ্রী হরিশংকরের কন্যা শ্রী কল্পনা রাণীকে বিয়ে করেন। তাকে নিয়েই সংসার করছেন বলে আমরা জানি।
এই বিষয়ে পরেশ চন্দ্র ওরফে আব্দুল হামিদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে, নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:‘অভাবের তাড়নায়’ কুড়িগ্রামে শিশু সন্তানকে পানিতে ফেলে দিলেন মা!
পরেশ চন্দ্র ওরফে আব্দুল হামিদের ছোট ভাই নির্মল চন্দ্র বলেন, ‘এই ঘটনা নতুন নয়। আমার বড় ভাই পূর্বেও এমন নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছে। সেগুলোর জরিমানা দিতে দিতে আমাদের পরিবারের সহায় সম্পত্তি শেষ। এরপর ২০০০ সালে ভাইয়ের সাথে পরিবারের সকলের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। সেই থেকে তার সাথে কোন যোগাযোগ নেই আমাদের। ’
রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু সরকার বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। ভুক্তভোগী নারী লায়লা বেগম থানায় অভিযোগ দিতে এসেছে। অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’