পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। বাড়িঘর ছেড়ে তারা আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্র, বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ওপর।
জোয়ার-ভাটা চলছে প্রতাপনগর ইউনিয়নের ১৭টি ও শ্রীউলা ইউনিয়নের ২২টি গ্রামসহ আশাশুনি সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রামে। সেখানে কোথাও এক খণ্ড জমিও শুকনো নেই। তার ওপর প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধসে পড়েছে শতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমিসহ গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। রান্না-বান্না ও গৃহস্থালীর কোনো কাজ করতে না পারায় শুকনো খাবারেই নিভাতে হচ্ছে পেটের ক্ষুধা।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের দীর্ঘ তিন মাস পেরিয়ে গেলেও পানিবন্দী হয়ে প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের মানুষ এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার ওপর অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সুপেয় পানির অভাবসহ চরম স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে দিনাতিপাত করছে লক্ষাধিক মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রিউলা এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইঊনিয়নের শত শত মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নে স্থানীয় ইউপি চেয়ারর্যানের নেতৃত্বে বুধবার সকাল থেকে আবারও এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে লেবুবুনিয়া গ্রামের ৬টি স্থানের রিংবাঁধ সংস্কারের কাজ করছেন।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, তার ইউনিয়নে এখনও ১০টি গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত।
শ্যামনগর উপজেলার গাবুরার লেবুবুনিয়া রিংবাঁধ সংস্কারের কাজ পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ইতোমধ্যে আশাশুনি ও শ্যামনগরের বন্যা দুর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ২৯০ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৩০টি পয়েন্টে সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা। ওই সময় বেশকিছু স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করা হলেও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে গত তিন মাস ধরেই পানির জোয়ার-ভাটা চলছে।
এলাকায় মানুষ রিংবাঁধ মেরামত করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও গত অমাবশ্যায় জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আবারও তলিয়ে যায় নতুন নতুন এলাকা।