আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টানা কয়েকদিন ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েও ভোটের মাত্র চারদিন আগে সিলেট বিভাগের একে একে ৪জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এমন প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোটে সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব, ক্ষমতাসীনদের পেশিশক্তির প্রভাব, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও প্রচারণায়, বিভিন্ন চাপ, হুমকি, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সহযোগিতা না পাওয়া, টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার ঘটনা ঘটছে ইত্যাদি।
তবে নির্বাচন কমিশন সবসময় আশ্বস্ত করছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। সেই লক্ষে ভোটগ্রহণের আগে ও পরের কয়েকিদন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মাঠে রয়েছে বিজিবি। এ ছাড়া ৩ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকছে সশস্ত্র বাহিনী। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন প্রার্থীদেরকে শাস্তির মুখেও পড়তে হচ্ছে।
প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচনী বিধিমালায় তারা প্রার্থী হিসেবেই গণ্য হবেন। তাছাড়া প্রার্থীরা লিখিত বা মৌখিকভাবে কোনো অভিযোগও দিচ্ছেন না; তাই প্রার্থীদের এ ধরনের ঘোষণা ব্যক্তিগত।
তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বলছেন, যারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন তাদের দেওয়া বিভিন্ন অভিযোগ ভিত্তিহীন। জনপ্রিয়তা না থাকায় তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে নানান অজুহাত খুঁজছেন ও অভিযোগ দিচ্ছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা পর্ন্ত সিলেট বিভাগের ৪ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকালে নিজের বাসায় প্রেস ব্রিফিং করে ভোট থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)- প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সুনামগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আবদুল মান্নান তালুকদার ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এর মাত্র একদিন আগে হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহেদ ও হবিগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পালও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
বর্জনের কারণ হিসেবে প্রার্থীরা যা বলছেন-
নির্বাচনকে পাতানো ফাঁদ উল্লেখ করে শেষ মুহূর্তে এসে ভোট বর্জনের ঘোষণার কারণ হিসেবে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)- প্রার্থী শামছুল আবেদীন বলেন, ‘ভোটের অধিকার রক্ষার্থে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।’
‘সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষে অনেক জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে কাজ করছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীও প্রচারণায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী টাকা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। কেউই নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। এটি একটি পাতানো ফাঁদ। তাই এই ফাঁদ থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম।’
হবিগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মুনিব বাবুকে সমর্থন করায় তার সমর্থনে সরে দাঁড়িয়েছেন।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ করে সুনামগঞ্জ-১ আসনের জাতীয় পার্টির আবদুল মান্নান তালুকদার বলেন, ‘আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, এটা আসন ভাগাভাগি ও প্রহসনের নির্বাচন।’
হবিগঞ্জ-২ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী শংকর পাল অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব রয়েছে। আছে ক্ষমতাসীনদের পেশীশক্তির প্রভাব।’
জাতীয় পার্টির প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা মোছাম্মাৎ জিলুফা সুলতানাকে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)- প্রার্থী দেওয়ান শামছুল আবেদীন যেসব অভিযোগের বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘ওই প্রার্থী যেসব অভিযোগ করছেন এসব বিষয়ে আমরা কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। তিনি যা বলছেন ওই প্রার্থীর উচিত ছিল একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া। তাহলে আমরা তদন্ত করে দেখতাম কিংবা অ্যাকশন নিতাম। ওই প্রার্থী মৌখিকভাবে কোনো অভিযোগ করে নাই। ওনি যা বলেছেন ওনার ব্যক্তিগত মতামত। আমি ওনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত নই।’