সিলেটের ওসমানীনগরে নিজ গৃহ থেকে শিক্ষিকার গলাকাটা লাশ ও একই ঘর থেকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে।
থানায় হত্যা মামলা ও অপমৃত্যুর মামলা দায়েরের পর এবার শিক্ষিকা কর্তৃক জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্কের জেরে গৃহকর্মীকে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত ৩০ জুন শিক্ষিকার স্বামী ডা. বিজয় ভুষন দেব ও ছেলে তন্ময় দে বিপ্লবকে অভিযুক্ত করে সিলেটের সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত গৃহকর্মীর ভাই বিশ্বনাথের দশঘর গ্রামের জহর লাল সরকারের ছেলে মরচান সরকার।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরে জোড়া খুনের মামলায় ৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড
মামলায় বলা হয়, নিহত শিক্ষিকা জোর প্রয়োগের মাধ্যমে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে যৌন সম্পর্কে জড়ান। চাপের মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে অবহিত করে তিনি আর ওই চিকিৎসকের বাড়িতে কাজে করবে না বলেও পরিবারকে জানায় ওই গৃহকর্মী।
ঘটনার দিন বিকালে শিক্ষিকা গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে বিশ্বনাথের দশঘর গ্রামে গিয়ে পরিবারের কাছে গৃহকর্মীকে বিয়ের দাবি জানায়। গৌরাঙ্গের পরিবার তাতে রাজি না হওয়ায় বিকাল চারটায় গৌরাঙ্গকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন শিক্ষিকা তাপতি দে লাভলী। ওই দিন রাত ১১ টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গৌরাঙ্গ ও শিক্ষিকা নিখোঁজের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে গৃহকর্মীর বড় ভাই মরচান শিক্ষিকার বাড়িতে এসে লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে শিক্ষিকার স্বামী ও পুত্র মিলে হুমকি ধামকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
নিহত গৃহকর্মীর ভাই মামলার বাদী মরচান সরকার বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় পরিবারের খরচ যোগাতে বিগত প্রায় ৬ বছর ধরে তাপতী রাণী দে লাভলী-ডা. বিজয় ভুষন দম্পতির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো আমার ভাই গৌরাঙ্গ। যাওয়ার পর থেকেই গৌরাঙ্গের ওপর নজর পড়ে শিক্ষিকার। তিনি জোর করে লিপ্ত হতেন অনৈতিক কাজে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া শিক্ষিকার স্বামী ও সন্তানদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তার স্বামী-সন্তান মিলে শিক্ষিকা ও গৌরাঙ্গকেও হত্যার পর জোড়া খুনের ঘটনাকে চাপা দিতে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন তারা (শিক্ষাকার স্বামী-ছেলে)। এ বিষয়ে আমরা আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আমি আমারা ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় জোড়া খুনের মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘বুধবার (৩০ জুন) মামলা দায়েরের আবেদন করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়েছেন। আদালত কার্যক্রম শুরুর পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন দিবাগত রাত ১২টায় ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শোয়ার গাঁও গ্রামের ডা. বিজয় ভুষন দে‘র বাড়িতে স্কুল শিক্ষিকা তাপতী রানী দে'র বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ এবং একই ঘর থেকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। তবে জোড়া লাশ উদ্ধারের প্রথম দিন থেকেই গৃহকর্মীর পরিবারের দাবি ছিল পরিকল্পিতভাবে শিক্ষিকাকে খুনের পর গৌরাঙ্গকে হত্যা করে তার লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে খুনীরা।