এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত যুবক পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, জালালাবাদ থানাধীন বাছিরপুর মোল্লাবাড়ী গ্রামের রহিম উদ্দিনের ছেলে মকছুদুল ইসলাম তাহদিল ভুক্তভোগী তরুণীকে বিয়ের আশ্বাস দেখিয়ে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পরে ওই তরুণী তাহদিলকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে নানা টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে মুখ না খুলার জন্য নানা ভয়ভীতি দেখানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাহদিল জালালাবাদ থানাধীন ওই তরুণীর বাড়িতে যায়। এ সময় যুবক জোরপূর্বক ওই তরুণীকে একটি কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে।
আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেনে প্রতিবন্ধীকে ‘ধর্ষণ’, রেল কর্মচারী আটক
গোয়ালন্দে সৎ মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘তরুণীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে থানায় বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করলে পুলিশ মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে। মামলায় একজনকেই আসামি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে। তরুণীকে হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে।’
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, সদস্য সমাপ্ত ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৭৫ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০৮ জনকে গণধর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ধর্ষণের পরে ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অন্য ১২ জন আত্মহত্যা করেছে।
এছাড়াও, মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনটি বলছে যে ১৬১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ১২ জন আত্মহত্যা করেছেন।
আসক আরও বলছে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করায় তিনজন নারী ও নয়জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া ৬২৭টি শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং ২০ জন ছেলেকে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে এবং ২১ জন নারী অ্যাসিড আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড
ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) বিল-২০২০’ পাস হয়।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ: আবারও পেছাল সাক্ষ্যগ্রহণ
ধর্ষণের শিকার গর্ভবতী তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করলো ৯৯৯
সিদ্ধিরগঞ্জে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ, আরেকজনকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০-এর ৯ (১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এখন ওই ধারায় ‘যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে।
এর আগে, দেশে সম্প্রতি ধর্ষণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের অধিবেশন না থাকায় গত ১৩ অক্টোবর ঘৃণ্য এ অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত আইনের (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন) একটি সংশোধনী প্রস্তাব অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সিলেট এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে দেশজুড়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবির মধ্যেই সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছিল।