তারা হলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পশ্চিম কৈখালী গ্রামের বাঙ্গালের ছেলে রতন (৩৫) ও মনো মিস্ত্রীর ছেলে মিজানুর রহমান (৪০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাতে রতন, মিজানুর ও জয়াখালী গ্রামের সাত্তারের ছেলে আবু মুসা পশ্চিম সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরতে যান। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে বনের তালপট্টি এলাকায় তাদের ওপর হঠাৎ করে বাঘ আক্রমণ করে। বাঘটি রতন ও মিজানকে জখম করে টানতে টানতে গহিন বনের ভেতরে নিয়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে বাঘের চামড়াসহ ‘শিকারি’ আটক
সন্ধ্যায় মুসা মোবাইল ফোনে বিষয়টি পরিবারকে জানান বলে জানিয়েছেন কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম।
বনজীবী রতনের বোন রত্না বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি রতন ও মিজানকে বাঘে ধরেছে। কিন্তু তারা এখন কোথায় আছে সেটা জানতে পারিনি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।’
বাঘের আক্রমণের মুখে পড়া বনজীবীরা কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস-পারমিট নিয়ে বনে যাননি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: বাঘের পায়ের ছাপে আতঙ্কে শরণখোলার গ্রামবাসী
এর আগে, মঙ্গলবার পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সিগঞ্জ কলবাড়ী এলাকায় চুনা নদীর পাড়ে একটি বাঘের দেখা মেলে। বাঘটি ছোট একটি খাল পার হয়ে সেখানে অল্প কিছু সময় অবস্থান করে আবারও বনের গভীরে চলে যায়। এ ঘটনায় সুন্দরবন এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
তার আগে, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখা যাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
মাটিতে থাকা বাঘের পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে বন বিভাগ জানায়, মধ্য বয়সী একটি বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে ভোলা নদী পার হয়ে ৯ জানুয়ারি রাতের কোনো এক সময় লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বাঘটি পুনরায় বনে ফিরে যায়। এটি লোকালয়ে কোনো ধরনের ক্ষতিসাধন করেনি।
আরও পড়ুন: বাঘ আতঙ্ক শেষে পঞ্চগড়ে বনবিড়াল আটক
বিভিন্ন সময় বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে গ্রামবাসীর ওপর আক্রমণ করেছে। বাঘ-মানুষের পাল্টাপাল্টি হামলায় মানুষ ও বাঘের প্রাণহানিও ঘটেছে।
বাঘের সংখ্যা
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে ১১৪ হয়েছে।
বাঘ গণনা নিয়ে ‘সেকেন্ড ফেইজ- স্ট্যাটাস অব টাইগারস ইন বাংলাদেশ সুন্দরবন ২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে কমছে বাঘের সংখ্যা, ২০ বছরে মারা গেছে ৩৮টি
ইউএসএআইডির আর্থিক সহযোগিতায় বেঙ্গল টাইগার কনজারভেশন অ্যাক্টিভিটি (বাঘ) প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয় ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর। ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলা এ কার্যক্রমে চার ধাপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা ও শরণখোলা রেঞ্জের তিনটি ব্লকের ১ হাজার ৬৫৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশেষ এক ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করে জরিপ চালানো হয়।
তার আগে, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাঘ গণনার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছিল। তখন হিসাব অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ২ পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাঘের মৃতদেহ উদ্ধার
ওয়াইল্ডটিম ও যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ সোনিয়ান কনজারভেশন ইনস্টিটিউটের সাথে বন অধিদপ্তর যৌথভাবে এবারের জরিপ পরিচালনা করে। আর জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ ও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে সাহায্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগ।