ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৭০ জন চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে ২ মাস ধরে।
আগের কর্মকর্তা বদলির পর যোগদান করা নতুন কর্মকর্তা শেষ বেতনের প্রত্যয়নপত্র না নিয়ে আসায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
এতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবাদান কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের।
গত মাসে যোগদান করা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অবহেলার কারণে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক-নার্স কর্মচারীদের।
এদিকে শারদীয় দুর্গাপূজায় বেতন-বোনাস না পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরর্ত ১৩ জন সনাতন ধর্মের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের আনন্দ ম্লান হয়েছে।
নাম প্রকাশ না শর্তে সনাতন ধর্মের কয়েকজন কর্মচারী জানান, উচ্চ পদে যারা চাকরি করেন, তাদের পয়সার অভাব নেই। এদিকে ওদিক করে তারা চলতে পারে। আমরা কর্মচারী, দিনশেষে বেতন-বোনাসের টাকা দিয়ে চলতে হবে। এবার পূজোয় বাচ্চাদের সামনে দাঁড়াতে পারিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমাসের বদলির পর ১ সেপ্টেম্বর ডা. শাকিলা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একই পদে যোগ দেন। ওই আদেশে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদানের কথা থাকলেও কর্মস্থলে যোগ দেন ১৩ সেপ্টেম্বর।
হাসপাতালের কর্মচারী ও সেবা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগ- যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস করেন না উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার।
তার অনুপস্থিতির সুযোগে জরুরি বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোরে শুরু হয়েছে অব্যবস্থাপনা। নিয়মিত বসছে না চিকিৎসক, ঘুরে যেতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা রোগীদের।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের লেদু রাম তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে।
আরও পড়ুন: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
দুপুর ২টায় তার স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে হাসপাতাল গেটে বসে লেুদরাম বলেন, ‘অফিসারের দরজাখান বন্ধ, এইতানে বাকি ডাক্তারদের কুনো খবর নাই। দেড় ঘণ্টা বসে থাকে বাড়িত যাচু, কাইল ঠাকুরগাঁও যাবা হবে, এ ছাড়া আর কুনো রাস্তা নাই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১১ জন চিকিৎসক, ৩৪ জন নার্স ও ১২৫ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা বন্ধের কারণে অনেক কর্মচারীর পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে মাসের ২৫ তারিখে হিসাব রক্ষণ অফিসে চলতি মাসের বিল দাখিল করার কথা থাকলেও এলপিসির কারণে সেটি জমা হয়নি। তাই অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান হিসাব রক্ষক ওয়ালিউল্লাহ লিটু জানান, শেষ বেতনের প্রত্যয়নের (এলপিসি) অনলাইন কপি এলেও হার্ড কপি হাতে না পাওয়ায় পূজার আগে বিলটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া উপায় নেই।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিলা আক্তার মুঠোফোনে জানান, অফিসে নিয়মিত না আসার অভিযোগ সঠিক নয়। তা ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রধান কর্মকর্তার বদলি হলে বেতন-ভাতা নিয়ে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, আমাদের বেলাও তাই হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ১৭০ জনের বিল-বেতন বন্ধ, বিষয়টি খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। তা ছাড়া অনলাইন এলপিসি দিয়ে হিসাব রক্ষণ বিল ছাড় দিচ্ছে না।
এ সমস্যা কবে সমাধান হবে- জানতে চাইলে তিনি জবাব দিতে পারেনি।
জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ঝামেলা করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। আমি অনেকবার বলেছি, এখন আবারও বলছি কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রাখার অধিকার কারো নেই।’
আরও পড়ুন: গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২০,৪০০ টাকা দাবি, মালিকদের ১০,৪০০ টাকা প্রস্তাব