নুসরাত
নুসরাত হত্যা: বাদী-বিবাদী পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি
ফেনীর আলোচিত নুসরাত হত্যা নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছে বাদী ও বিবাদী পক্ষ।
রবিবার সকালে সোনাগাজীর ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির পরিবারের পক্ষে ফেনী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানি এবং দুপুরে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির পরিবার পরিজনরা মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যা: ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন শুনানি ৩ মাস মুলতবি
নুসরাত হত্যার ৩য় বাষির্কী, সামাজিক অপপ্রচারে আতংকিত পরিবার
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাতের ভাই নোমান বলেন, নুসরাত হত্যার ঘটনা ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি পক্ষ। তারা সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানাভাবে তাদের জড়িয়ে হয়রানি ও গুজব ছড়াচ্ছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সকল তথ্য প্রমাণ সহকারে আদালত মামলার রায় ঘোষণা করেন। এই রায়কে তারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই এ নিয়ে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান নোমান।
অন্যদিকে দুপুরের দিকে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে নুসরাত হত্যা মামলা পুনঃতদন্তের দাবিতে মামলায় মৃত্যুণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির পরিবার ও তাদের স্বজনরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ও মানববন্ধন করেছে।
মানববন্ধনে তারা জানায়, নুসরাত জাহান রাফি আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ একটি মহল ঘটনাটিকে হত্যার নাটক সাজিয়ে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের ফাঁসিয়েছে। তাই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় বাতিল করে ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি তোলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসা থেকে নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১০ এপ্রিল রাতে নুসরাত মারা যান।
ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ এপ্রিল সোনাগাজী থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পরে সেটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
ওই মামলায় একই বছরের ২৪ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
আরও পড়ুন: আলোচিত নুসরাত হত্যার দুই বছর
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর, আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার
২ বছর আগে
প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জজ হচ্ছেন নুসরাত
প্রথম মুসলিম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল জজ হচ্ছেন একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক নুসরাত জাহান চৌধুরী। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। আমেরিকার নিউইয়র্ক রাজ্যের একটি ফেডারেল জেলা আদালতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন তিনি।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাকে বিচারক হিসেবে মনোনীত করেছেন। বুধবার বিভিন্ন বিচার বিভাগীয় মনোনীতদের তালিকা ঘোষণা করার সময় হোয়াইট হাউস এ তথ্য জানায়। মার্কিন সিনেটে অনুমোদিত হলে তিনি হবেন প্রথম মুসলিম নারী এবং দ্বিতীয় মুসলমান বিচারক এবং যুক্তরাস্ট্রের ফেডারেল জজ হিসিবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি বংশো্ভেূত মার্কিন নাগরিক।
নুসরাত চৌধুরী বর্তমানে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) এর ইলিনয় অধ্যায়ের আইনি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এটি মূলত একটি নাগরিক অধিকার আদায়ের সংগঠন। তিনি এর আগে নিউইয়র্কে এসিএলইউ-এর জাতিগত বিচার কর্মসূচির উপ-পরিচালকসহ বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।
তিনি ফেডারেল সরকারের নো ফ্লাই লিস্ট এবং নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের শহরের মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে মামলাসহ অসংখ্য নাগরিক অধিকারের মামলায় জড়িত ছিলেন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার আনুষ্ঠানিকভাবে নুসরাত চৌধুরীকে নিউইয়র্কের ফেডারেল বেঞ্চে নিয়োগ দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন এবং তাকে ‘নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিশেষজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা ব্লিনকেনের
মুসলিম-আমেরিকান আইনজীবীদের সংস্থামুসলিম অ্যাডভোকেটস শুমার এবং তার সহযোগী নিউইয়র্কের সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্র্যান্ডকে সেই বছরের শুরুতে নুসরাত চৌধুরীর মনোনয়নের জন্য অনুরোধ করেছিল।
বুধবার গ্রুপটি ‘এই ঐতিহাসিক মনোনয়ন দেয়ার জন্য’ বাইডেন এবং শুমারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। মুসলিম অ্যাডভোকেটস বলছে, নুসরাত চৌধুরী এমন এক সময়ে মুসলিম এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য তার কর্মজীবন উৎসর্গ করেছেন যখন বিচার ব্যবস্থায় স্পষ্টতই বৈষম্য চলছিল। তিনি বিচার ব্যবস্থাকে ন্যায়বিচারের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবেন। এবং এমন এক সময়ে নুসরাত চৌধুরী প্রথম মুসলিম নারী, প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান এবং দ্বিতীয় আমেরিকান মুসলিম হিসেবে একজন ফেডারেল বিচারক হিসেবে কাজ করবেন যখন ঘৃণা এবং বিভাজন আমাদের আলাদা করে দিচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবন
নুসরাত জাহানের বাবার নাম ড. নুরের আর. চৌধুরী এবং মায়ের নাম নুসরাত নাফিসা এ. চৌধুরী। তার জন্মের আগে তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
তার মা নর্থব্রুক, ইলিনয় এবং আশেপাশের অঞ্চলে ব্যাকরণ স্কুল এবং মিডল স্কুলগুলোর জন্য একজন খাদ্য-পরিষেবা সমন্বয়কারী ছিলেন।
আরও পড়ুন: শাস্তি নয়, সতর্ক করতে নিষেধাজ্ঞা: মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ডা. নুরের আর চৌধুরী শিকাগোর নাজারেথ হাসপাতালের সেন্ট মেরিস-এর নিউরোলজির প্রধান এবং শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজির সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন।
২০১২ সালে গ্রাফিক ডিজাইনার মাইকেল আর্লিকে বিয়ে করেন নুসরাত।
ইউএস ফেডারেল আদালত ফেডারেল অপরাধ এবং দেওয়ানী মামলার আইনি প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধান করে। বিচারিক পর্যালোচনা করার এবং মার্কিন সংবিধানের লঙ্ঘন করলে রাষ্ট্র ও ফেডারেল আইনগুলো রদ করারও ক্ষমতা রয়েছে তাদের।
সমস্ত মার্কিন ফেডারেল মামলা প্রথমে জেলা আদালতে শুরু হয় এবং মার্কিন আপিল আদালতে আপিল করতে পারে। আর দেশের শীর্ষ আদালত হিসেবে ফেডারেল বিচার ব্যবস্থায় আপিলের তৃতীয় এবং চূড়ান্ত স্তর হল মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি সমস্ত ফেডারেল বিচারক নিয়োগ করেন। তবে তার মনোনয়নের পর সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হতে হয়। বুধবার হোয়াইট হাউস বাইডেনের বিচার বিভাগীয় মনোনয়নের বৈচিত্র্য তুলে ধরেছে। ফেডারেল পাবলিক ডিফেন্ডার হিসেবে আরিয়ানা ফ্রিম্যান নামে একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন বাইডেন। যিনি তৃতীয় সার্কিটের জন্য ফিলাডেলফিয়া-ভিত্তিক আপিল আদালতে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী হিসেবে কাজ করবেন।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ভাবমূর্তি উন্নয়নে বাংলাদেশ লবিস্ট নিয়োগ করতে পারে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
২ বছর আগে
আলোচিত নুসরাত হত্যার দুই বছর
ফেনীর আলোচিত দগ্ধ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দুই বছর আজ শনিবার।
২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। পরদিন ১১ এপ্রিল বিকালে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে নামাজে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
নুসরাত জাহান রাফির ওপর অগ্নিসন্ত্রাসের দুই বছর উপলক্ষে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। নুসরাতের বাড়ির দরজায় পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় তিনজন পুলিশ পাহারায় রয়েছেন।
নুসরাতের মৃত্যুবাষির্কীতে কুরআন খতমের মাধ্যমে মসজিদ ও পারিবারিকভাবে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হবে বলে জানান নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, দুই বছর পার হলেও আজও প্রতিদিন ভোরে তাকে খুঁজি । মনে হয় এইবুঝি নুসরাত এসে জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাকছে। তার স্মৃতি আজও ঘরে, বাড়ির সবকিছুতেই রয়েছে। তার পড়ার বই, জামা কাপড় ও পছন্দের সবকিছুই গোছানোভাবে রাখা হয়েছে ঘরের মধ্যে।
নুসরাতের শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা জব্দ
আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না।
বিচারে দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনদের অপপ্রচারে আজও আতঙ্কিত নুসরাতের পরিবার।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসামিদের স্বজন ও একশ্রেণির অপপ্রচারকারীরা সক্রিয় হয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে অপপ্রচার করে যাচ্ছে। যার কারণে আমরা সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে আতঙ্কিত থাকি।
আরও পড়ুন: পিবিআইয়ের তদন্তে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ
নোমান বলেন, আমরা বিচারিক আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। উচ্চ আদালতেও আমরা ন্যায় বিচার প্রত্যাশী। আমাদের পরিবারের জন্য খুনিরা ও তাদের স্বজনরা মারাত্মক হুমকি হচ্ছে তাদের ফেসবুক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যা ইচ্ছা তাই লিখে যাচ্ছে। আমাদের জন্য খুনি ও তাদের স্বজনদের ব্যবহৃত ফেসবুকই হচ্ছে চরম আতঙ্ক।
তিনি বলেন, আমরা এই মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে কিছু দিন পূর্বে আমাদের আইনজীবী শাহাজাহান সাজুর মাধ্যমে জেনেছি করোনা পরিস্থিতির কারণে মামলাটির বেঞ্চ গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চারদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করে নুসরাত।
আরও পড়ুন:নুসরাত হত্যাকাণ্ড: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’
গত ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন। আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
৩ বছর আগে
নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ২ বছর, আসামিদের দ্রুত ফাঁসি কার্যকর চায় পরিবার
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার।
২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে নিয়ে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।
সেই থেকে প্রতিদিন ভাত খেতে গেলে মেয়ে নুসরাতের কথা মনে পড়ে মা শিরিনা আক্তারের। শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় ভাত খেতে চাওয়ার পরও মেয়েকে ভাত দিতে না পারার যন্ত্রণা তাকে এখনো কাতর করে।
আরও পড়ুন: নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বোরকা জব্দ
নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে পানি ও ভাত না খেয়ে মারা গেছে আমার মেয়ে। ক্ষুধায় মেয়ে পানি ও ভাত খেতে চেয়েছিল। ওর শ্বাসনালি পুড়ে গেছে তাই ডাক্তাররা আমাকে পানি ও ভাত দিতে নিষেধ করেন। আজ আমি দুইটা বছর যখন ভাত খেতে যাই, আমার নুসরাতের কথা মনে পড়ে। আমার মেয়ে ভাত, পানি খেয়ে যেতে পারে নাই। আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে।’
প্রিয় কন্যা রাফির শূন্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছি। শুনেছি উচ্চ আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের রায় দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন: পিবিআইয়ের তদন্তে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ
আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, আজ দুই বছর আমি আমার মেয়ের কণ্ঠে মা ডাকটি শুনতে পাই না। রাতে ঘুম হয় না। কারণ আমার মেয়ের হাত-পা বেঁধে যখন তারা আগুন লাগিয়েছিল, তখন আমার মেয়ে কি করেছিল? সেদিন আমি খবর পেয়ে ফেনী সদর হাসপাতালে ছুটে যাই, তখন পুলিশ সদস্যরা আমার মেয়ের কাছে ভিড়তে দেয় নাই। তার পুরো শরীর ব্যান্ডেজ করে ফেলে ডাক্তাররা। পুলিশরা আমাকে বলে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাঁচে কিনা সন্দেহ? আপনি মেয়ের আগুনে পোড়া এই শরীর দেখলে সহ্য করতে পারবেন না। ডাক্তাররা আপনাকে দূরে থাকতে বলেছে। তখন আমার মেয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।
নুসরাতের মা বলেন, আমার মেয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমাকে অনেক কথা বলেছে। তখন আমার মেয়েকে আমি বলেছিলাম মামলা তোলার জন্য সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দিতা। তাহলে আজকে তোমার এই অবস্থা হতো না। তখন আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল মা মৃত্যুকে ভয় পাই না। তারা সাদা কাগজ ধরে সিগনেচার (স্বাক্ষর) চেয়েছিল তখন আমার মেয়ে রাজি না হওয়ায় তারা হাত-পা বেঁধে কেরোসিন তেল ঢেলে আমার মেয়ের গায়ে দিয়াশলাই মেরে আগুন ধরিয়েছিল। তখন আমার মেয়ে যে চিৎকার দিয়েছিল কেউ শুনতে পায়নি।
আরও পড়ুন:নুসরাত হত্যাকাণ্ড: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’
তিনি বলেন, আজকে দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাসে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা মনেরে বুঝ দিতে পারবে, করোনাভাইরাসে তারা মারা যাচ্ছে। কিন্তু আমার মেয়েকে জানোয়ারেরা হাত-পা বেঁধে আগুন দিয়ে পুড়ে মেরেছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ৯৯ ভাগ মানুষ আমার মেয়ের পাশে ছিল। আমাদের পরিবারের পাশে ছিল। আসামি ও তাদের স্বজনরাসহ ১ ভাগ মানুষ আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে থাকতে পারে।
২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ মামলার রায়ে ১৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়।
আসামিরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।
রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানালেন নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার।
নুসরাতের বড় ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, তিনি আশা করছেন নিম্ন আদালতের দেয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।
তিনি দ্রুত রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহানকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতহানির মামলা তুলে না নেয়ায় তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। চার দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন নুসরাত। ১০ এপ্রিল বিকালে সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল মাঠে জানাজা শেষে তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
৩ বছর আগে
নুসরাত হত্যা: মঙ্গলবার হাইকোর্টে যাবে ডেথ রেফারেন্স
ফেনী, ২৮ অক্টোবর (ইউএনবি)- মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মঙ্গলবার হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
৫ বছর আগে
নুসরাত হত্যা: অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড
ফেনী, ২৪ অক্টোবর (ইউএনবি)- বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ আসামির প্রত্যেকের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
৫ বছর আগে
নুসরাত হত্যা মামলায় পিবিআই প্রধানকে তলবের আবেদন নামঞ্জুর
ফেনী, ০৮ সেপ্টেম্বর (ইউএনবি)- সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যা মামলায় সাক্ষী হিসেবে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারকে আদালতে তলবের জন্য আসামি পক্ষের আইনজীবীর আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত।
৫ বছর আগে
নুসরাতের শ্লীলতাহানি: অধ্যক্ষ সিরাজের বিচার শুরু
ফেনী, ০৫ আগস্ট (ইউএনবি)- ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছে আদালত।
৫ বছর আগে