পাটকল
পাটকল চালুর অপেক্ষায় খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকেরা
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল বন্ধের তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। ভালো নেই চাকরিহারা প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
তবুও পাটকল চালু হবে সাইরেন বাজবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন শ্রমিকেরা।
মিল বন্ধ থাকায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ৯টি পাটকলের ৫ হাজার ৮৩টি তাঁত ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। ফলে আবার এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে মিলগুলো উৎপাদনে যেতে পারবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
আরও পড়ুন: খুলনায় পাটকলের আগুন নিয়ন্ত্রণে
শ্রমিকরা জানান, লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল বন্ধ করে দেয় সরকার।
লিজের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে তিন মাসের মধ্যে মিলগুলো আবার চালুর ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি।
শ্রমিকরা জানান, কিন্তু এখনও চালু হয়নি। তাদের কেউ কেউ অন্য পেশায় ঢুকলেও অনেকেই বেকার। খালিশপুর, দিঘলিয়া ও আটরা শিল্প এলাকার পাটকল বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে।
শ্রমিকরা আরও জানান, অনেকে এলাকা ছেড়ে নিজ জেলায় সপরিবারে ফিরে গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে মিল কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানপাট। নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে শিল্প এলাকা।
প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, মিল বন্ধের সময় বলা হয়েছিল তিন মাসের মধ্যে চালু করা হবে। কিন্তু আজ তিনটি বছর পার হয়েছে। এখনও মিল চালু হয়নি। বেকার হয়ে কষ্টে দিন কাটছে। মাঝে ঢাকা একটি শো-রুমে চাকরি করেছি। পরে সেখান থেকে চলে আসতে হয়েছে।
তিনি জানান, পরিবারে তিন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী ও আমিসহ ৫ জন। সংসারের খরচ, লেখাপড়া, চিকিৎসা খরচসহ ঊর্ধ্বগতির বাজারে ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে কাজ পেলে করি, না হলে বেকার বসে থাকতে হয়।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করছি।
খালিশপুর প্লাটিনাম জুট মিলের মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের শ্রমিক ছিলেন আব্দুল জলিল। ১৯৯৬ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০২০ সালের জুলাইয়ের শুরুতেই মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর বেকার হন জলিল।
তিনি অবসায়নের অর্ধেক টাকা পেলেও পাননি সঞ্চয়পত্রের টাকা। সঞ্চয়পত্রের টাকার জন্য তিন বছর ধরে ঘুরছেন মেইল দপ্তরে। বর্তমানে প্লাটিনাম জুট মিলের সামনেই একটি দোকা ভাড়া নিয়ে চা, বিস্কুট, রুটি, কলা বিক্রি করে কোনোরকম দিন পার করছেন।
এছাড়া অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসা, বাড়ি ভাড়া, লেখাপড়াসহ সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
একই মিলের আরেক শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, মিল বন্ধের তিন বছর অতিবাহিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের টাকা পাইনি। মিলের কাছে ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা পাওনা ছিল। যার মধ্যে নগদে অর্ধেক পেয়েছি। বাকি ৮ লাখ ৩২ হাজার টাকা সঞ্চয়পত্রে পাওনা রয়েছে এখনও।
তিরি বলেন, গত তিন বছর সংসারের হানি টানতে টানতে নগদ অর্থ সবই শেষ। নিজের কোনো কাজ নেই। তবুও ছয় সদস্যের পরিবার চালাতে হয়। এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি ও স্ত্রীকে নিয়ে হাউজিং বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করি। অনেক কষ্টে আছি, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: বিটিএমসির পাটকল ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩,১৬৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে: পাটমন্ত্রী
তিনি বলেন, গেল তিন বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি, তবুও সঞ্চয়পত্র পাইনি। মিল বন্ধ করে আমাদের পথে বসিয়েছে। এই বয়সে কোথাও কাজ করার সুযোগ নেই। এক ছেলে পরিবহনে কাজ করে। তার আয় দিয়ে সংসার চলে না। মেয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের লেখাপড়া করে। চিকিৎসাও করাতে পারি না। এখন দেনা হয়ে গেছি।
তিনি আরও বলেন, ঘর ভাড়া, বাজার-ঘাট, লেখাপড়ার খরচ মেটাতে পারি না। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
এছাড়া দ্রুত পাওনা পরিশোধ এবং মিল চালুর দাবি জানান তিনি।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মিল বন্ধের আগে শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ এবং দ্রুত মিল চালু করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনটি বছর পার হতে চলেছে। এখনও অনেক শ্রমিকের সঞ্চয়পত্রের টাকা পাওনা রয়েছে।
তিনি বলেন, মিল চালুর ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও আমরা জানতে পারিনি। ২৬টি মিল বন্ধের পর শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। অনেকে দিনমজুর, রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। অনেকেই কর্ম হারিয়ে নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। শ্রমিকরা অনেক কষ্টে রয়েছে। আমাদের দাবি শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করা হোক। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় মিলটি চালু করা হোক।
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, পাটকল বন্ধের পর থেকে শ্রমিকরা কষ্টে আছে। মিল চালুর প্রতিশ্রুতি থাকলেও অগ্রগতি নেই।
তিনি বলেন, বিআইডিসি সড়কের আলমনগর মোড় থেকে নতুন রাস্তা মোড় পর্যন্ত অর্ধেক দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, মিলগুলোর কাছে ২১৪ শ্রমিকের নগদ ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৩১৫ শ্রমিকের ৭৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র পাওনা রয়েছে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. গোলাম রব্বানী বলেন, মাসখানেক আগে যশোরের জেজেআই জুট মিল আকিজ গ্রুপকে লিজ দেওয়া হয়েছে। তারা শিগগিরই মিলটি চালুর চেষ্টা করছে। খুলনার প্লাটিনাম জুট মিল ফরচুন গ্রুপকে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, অন্য ছয়টি পাটকল লিজ দেওয়ার জন্য জুনের মাঝামাঝি তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আর আলিম জুট মিলের মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব থাকায় এটি লিজ দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
তিনি বলেন, অধিকাংশ শ্রমিকের টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা, নামের ভুলসহ বিভিন্ন প্রকার জটিলতা থাকায় তারা এখনও সব টাকা পাননি। সেগুলোও পর্যায়ক্রমে পরিশোধের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, যন্ত্রপাতিগুলো মাঝেমধ্যে মেইনটেন্যান্স ও চালু করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু যেভাবে মেইনটেন্যান্স করা দরকার, তা অর্থাভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: খুলনার বেসরকারি ১৭ পাটকল বন্ধ হওয়ার উপক্রম
৮৯৮ দিন আগে
বিটিএমসির পাটকল ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩,১৬৮ কোটি টাকা লোকসান করেছে: পাটমন্ত্রী
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) আওতাধীন পাটকলগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরে তিন হাজার ১৬৮ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা লোকসান করেছে।
বৃহস্পতিবার সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সময়ে পাটকলগুলো ৪৮৪ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা আয় করেছে এবং ব্যয় করেছে তিন হাজার ৬৫২ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা।
স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালিত হয়।
মন্ত্রী বলেন, বিটিএমসির অধীনে ২৫টি পাটকলের মধ্যে ২৪টি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং একটি ভাড়া দেয়া হয়েছে।
বন্ধ হওয়া ২৪টি মিলের মধ্যে দুটিতে টেক্সটাইল পল্লী স্থাপন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কারখানা নির্মাণে কোনো অনিয়ম চলবে না: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী
ঢাকা-১৮ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হাবিব হাসানের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, বর্তমানে (২০১৮ আদমশুমারি অনুযায়ী) দেশে ৫৮৯টি তাঁত কারখানা ও এক কোটি ১৬ হাজার ১১৭টি ইউনিট রয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁত শিল্প বছরে প্রায় ৪৭ দশমিক ৪৭ কোটি মিটার তাঁত কাপড় উৎপাদন করে যা দেশের বস্ত্র চাহিদার ২৮ শতাংশ পূরণ করে (পাওয়ার লুম বাদে)।
নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশে তাঁতের সংখ্যা দুই লাখ ৯০ হাজার ২৮২টি।
সংসদ সদস্য বেগম লুৎফুন্নেসা খানের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের আট মাসে পাঁচ দশমিক ছয় লাখ টন কাঁচা পাট রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে পাঁচ দশমিক ৮৬ লাখ টন কাঁচা পাট এবং সাত দশমিক ৮২ লাখ টন পাটজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে: পাটমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আজীবন কাজ করে যাব: পাটমন্ত্রী
১৩৫৭ দিন আগে
খুলনায় বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের নারী শ্রমিকদের মানবেতর জীবন
সরকারের সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ১ জুলাই দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে খুলনার নয়টি মিল রয়েছে। এসব মিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। যার বড় একটি অংশ নারী শ্রমিক। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব শ্রমিকরা।
১৯২৭ দিন আগে
আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় পাটখাতের যুগোপযোগি সংস্কার করা হচ্ছে: সচিব
বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া মঙ্গলবার বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় পাটখাতের যুগোপযোগি সংস্কার করা হচ্ছে।
১৯৬১ দিন আগে
পাটকলের শ্রমিক আন্দোলন থামাতে কোনো ব্যয় হয়নি: সরকার
সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রয়াত্ত পাটকলের শ্রমিক আন্দোলন থামাতে বড় অর্থ ব্যয় হয়েছে বলে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ হলেও তা অস্বীকার করে সরকার বলছে, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অসত্য তথ্য প্রচার করেছে।’
১৯৬৮ দিন আগে
খুলনায় পাটকলের ২ শ্রমিক নেতাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ
খুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের দুইজন শ্রমিক নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
১৯৯০ দিন আগে
খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন স্থগিত
খুলনায় আন্দোলনরত পাটকল শ্রমিকদের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
১৯৯৫ দিন আগে
খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ পাটকল আংশিক চালু
এক মাস পর খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রবিবার থেকে আংশিকভাবে চালু হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে পাটকলগুলোতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ছিল।
২০৬১ দিন আগে
খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন অব্যাহত
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে খুলনা ও যশোরের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের আমরণ অনশন সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে।
২১৭৯ দিন আগে