হাসপাতালে বহির্বিভাগে এক সময় রোগীর ভিড় লেগে থাকলেও এখন গড়ে মাত্র ৫০-৬০ জন রোগী হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। আর ইনডোরে গড়ে ১২-১৩ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এমন পরিস্থিতির জন্য চিকিৎসক ও জনবল সংকটকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নীলফামারীতে এক সময় কুষ্ট রোগের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ায় সরকারিভাবে হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ঢাকা, সিলেট ও নীলফামারীতেই এর কার্যক্রম চালু আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুষ্ঠ হাসপাতালে ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে মাত্র ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু এই ২০ জনের মধ্যে ১২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেষণে বদলি করা হয়। বর্তমানে ৮ জন দিয়ে হাসপাতালটি চলছে। এর মধ্যে আছেন (প্রেষণে) মেডিকেল অফিসার একজন, নার্স একজন, সহকারী নার্স একজন, এমএলএসএস দুই জন, আয়া একজন, মশালচি একজন ও ঝাড়ুদার একজন।
শূন্য পদগুলোর মধ্যে রয়েছে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (লেপ্রসি) একটি ও মেডিকেল অফিসার ৩টি। এ ছাড়া কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার একটি এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্টের (ল্যাব) দুইটি পদই শূন্য। সিনিয়র স্টাফ নার্স (কর্মকর্তা) মঞ্জুরিকৃত পদ ১৫টির বিপরীতে কর্মকর্তা আট জন; বাকি সাত জনের পদ শূণ্য। আবার ওই আট জনের মধ্যে কুষ্ঠ হাসপাতালে একজনকে রেখে বাকিরা ডেপুটেশনে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে যোগদান করেন।
এদিকে, সহকারী নার্স পাঁচ জনের বিপরীতে কর্মরত একজন। অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদটি শূন্য। এমএলএসএস (অফিস সহায়ক) ছয় জনের বিপরীতে কর্মরত দুই জন। বাকি চার জনকে অন্যত্র প্রেষণে বদলি করা হয়।
আয়া তিন জনের বিপরীতে কর্মরত দুজন। এর মধ্যে একজনকে প্রেষণে সরিয়ে জেলার কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কুক-মশালচি দুই জনের বিপরীতে কর্মরত একজন, বাকি একজনকে জেলার ডিমলা হাসপাতালে প্রেষণে বদলি করা হয়। ঝাড়ুদার (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) তিন জনের বিপরীতে কাজ করেন একজন। বাকি দুই জনকে অন্যত্র প্রেষণে বদলি করা হয়।
হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী কবির হোসেন জানান, আগে তিন জন কাজ করেও সামাল দেয়া যেত না। আর এখন তিন জনের কাজ একাই করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, হাসপাতালের রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা একেবারেই বন্ধ। ওই পদে জনবল না থাকায় ইনডোরের রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
হাসপাতালে ভর্তিরত সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমতাজ আলী প্রামাণিক জানান, সরকারের দেয়া খাবার, স্টেশনারি, পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা ও এমএস আর (যন্ত্রপাতি, ওষুধ, ল্যাবরেটরি জিনিসপত্র) বাবদ পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। শুধু জনবলের অভাবে রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আশা করি, জনবান্ধব এই সরকার কুষ্ঠ রোগীদের সুচিকিৎসার কথা বিবেচনা করে মঞ্জুরিকৃত পদসমূহ পূরণ ও প্রেষণকুত কর্মচারীদের পুনঃবহাল করে হাসপাতালটি পুরোদমে সচল করবে।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ভির্জিনিয়া শুক্লা বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সবেমাত্র এই হাসপাতালে প্রেষণে যোগদান করেছি। তাই এসব বিষয় কিছুই জানি না।’
এ ব্যাপারে হাসপাতালের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর সংখ্যা কম থাকায় কয়েকজনকে সরিয়ে জেলার অন্যান্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়লে তাদের পুনারায় কর্মস্থলে ফিরিয়ে নেয়া হবে।’
সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবির মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি সদ্য এই জেলায় যোগদান করেছি। জনবল সংকট থাকলে তা কর্তৃপক্ষের নজরে এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোগীর বর্তমান পরিস্থির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’