নিহত আফসানা আফরিন সুমি (১৯) ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিসিপ্লিনের ২০তম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। তিনি নগরীর ফুলবাড়ি গেটের মীরেরডাঙ্গা এলাকার ইউনূস মোল্লার মেয়ে।
পরিবার সূত্র জানায়, আফসানা শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিজ বাসভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেন। পরে পরিবারের লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: প্রেমিককে দায়ী করে বগুড়ায় কলেজছাত্রীর ‘আত্মহত্যা’
গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা: ৯৯৯ এ ফোন কলে উদ্ধার
খুলনা জাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘ওই ছাত্রীর মরদেহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আছে। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, ওই ছাত্রী ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতেন না। এই নিয়ে তার মা ঝগড়া করেছিলেন। এ ঘটনায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা বাড়ার কারণ
বয়স এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যার নাটকীয় উত্থানের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘আত্মহত্যা’ ও নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিডের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপকে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শ দান দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও এডুকেশনাল এবং কাউন্সিলিং সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মেহজাবীন হক বলেন, ‘হতাশা, ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা এবং বিভিন্ন মানসিক রোগের কারণে বেশিরভাগ মানুষ আত্মহত্যা করেন। সময়মতো এই ব্যাধিগুলোর যত্ন নেয়া গেলে, আমরা সহজেই আত্মহত্যার সংখ্যা কমিয়ে আনতে পারি।’
আরওপড়ুন: ভালোবাসা দিবসে ‘প্রেমিকার’ সাথে অভিমান করে যুবকের আত্মহত্যা
গলায় ফাঁস দিয়ে শাবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
এক হাজার টাকার জন্য লাঞ্ছিত, অপমানে ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা
অধ্যাপক মেহজাবীন হক বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোট লেখা বা হতাশা প্রকাশ করা আত্মহত্যার কথা ভাবা মানুষের প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিত। তাদের কথা আমাদের শুনতে হবে, তাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে তারা একা নয়, তাদের জীবন মূল্যবান। ভবিষ্যতের বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে বর্তমানের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে যা আমাদের ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। আমাদের আশাবাদী হতে হবে।’
শারীরিক অসুস্থতার মতো মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন শীর্ষস্থানীয় এই মনোবিজ্ঞানী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মেহতাব খানম বলেন, ‘কেস বিশ্লেষণ না করে কোভিড চলাকালীন আত্মহত্যা বা এ ধরনের প্রবণতার পেছনের কারণ চিহ্নিত করা খুব কঠিন। তবে কেউ যদি আত্মঘাতী হয়ে ওঠে, পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে মোকাবিলায় তাদের ব্যস্ত রাখা আমাদের কর্তব্য।’