বর্ণবাদ ইস্যুতে স্পেনকে কাঠগড়ায় তোলায় এবার ভিনিসিউস জুনিয়রের ওপর ক্ষেপেছে তারই ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। শুধু তাই নয়, ব্রাজিলীয় এই ফরোয়ার্ড ক্লাবের আদর্শও ধারণ করছে না বলে অভিযোগ কর্তৃপক্ষের।
পর্তুগাল ও মরক্কোর সঙ্গে যৌথভাবে ২০৩০ সালের ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে স্পেন। তবে দেশটিতে বর্ণবাদের অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে স্প্যানিশ পত্রিকাগুলোর প্রধান শিরোনাম হন ভিনিসিউস।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি না হলে ভেন্যু পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
ভিনিসিউস বলেন, ‘২০৩০ সাল পর্যন্ত আমাদের পরিবর্তনের অনেক জায়গা আছে। আশা করি, স্পেন (মানসিকভাবে) আরও বিকশিত হবে এবং বুঝতে পারবে যে গায়ের রঙের কারণে কাউকে অপমান করা কতটা গুরুতর অপরাধ।’
‘যদি ২০৩০ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, আমি মনে করি আমাদের (বিশ্বকাপ) ভেন্যু সরিয়ে নিতে হবে। কারণ বর্ণবাদের শিকার হতে পারে- এমন আশঙ্কা যদি কোনো খেলোয়াড়ের থাকে, তাহলে তিনি সেই দেশে খেলতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ বোধ বোধ করেন না। সেখানে তার জন্য খেলা কঠিন।’
ভিনিসিউসের এমন মন্তব্য স্পেনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন যে, ভিনিসিউস ভুলভাবে স্পেনকে বর্ণবাদী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
এল চিরিঙ্গিতোয় এক শোতে মাদ্রিদ ও স্পেনের সাবেক গোলরক্ষক পাকো বুইয়ো বলেছেন, ‘দেশের সবাইকে এক কাতারে ফেলেছেন ভিনিসিউস, বিষয়টি ভাবলেই কষ্ট পাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: বর্ণবাদ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে স্পেনে বিশ্বকাপ চান না ভিনিসিউস
ভিনিসিউসের মন্তব্যে ক্ষেপেছেন মাদ্রিদের মেয়র হোসে লুইস মার্তিনেস-আলমেইদাও। বুধবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় রিয়াল তারকার বক্তব্যের সমালোচনা করেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘আশা করি, অবিলম্বে তিনি এই বক্তব্য সংশোধন করবেন। হ্যাঁ, আমাদের সমাজে এখনও কিছু বর্ণবাদী ঘটনা ঘটছে এবং তাদের নির্মূল করার জন্য কঠোর পরিশ্রমও করছি আমরা। তবে স্পেন ও মাদ্রিদকে নিয়ে ঢালাওভাবে এটি বলা অন্যায় যে, আমরা একটি বর্ণবাদী সমাজ, যেমনটি তিনি বলেছেন।’
‘তার এই মন্তব্য মাদ্রিদ ও স্পেনে ২০৩০ বিশ্বকাপের আয়োজনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তিনি একজন অসাধারণ ফুটবলার, তার মানে এই নয় যে, মুখে যা আসে তিনি তা-ই বলবেন। অথচ সেটিই তিনি করে চলেছেন।’
মাদ্রিদ ও স্পেনের মানুষের কাছে ভিনিসিউসের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেন মার্তিনেস-আলমেইদা।
ভিনির ক্লাব সতীর্থ ও অধিনায়ক দানি কারভাহালও এ বিষয়ে তার সমালোচনা করেন। এবার বিষয়টি নিয়ে খোদ রিয়াল মাদ্রিদ থেকে অসন্তোষের কথা জানা গেছে।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্তের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিনিসিউসের ওই মন্তব্যে মোটেও খুশি নয় রিয়াল মাদ্রিদ, বরং এই ফরোয়ার্ডের ওপর তারা ধৈর্য্য হারাতে শুরু করেছে।
ক্লাবটির বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির দাবি, রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বের কাছে যে ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চায়, ভিনিসিউস তা ধারণ করে না বলেই বিশ্বাস ক্লাব কর্তৃপক্ষের। তাছাড়া মাঠেও তার আচরণ উত্তেজনাকর।
স্পোর্ত বলছে, যদি এসব চলতে থাকে, তবে আসন্ন ব্যালন দ’রের জয়ের অন্যতম ফেভারিট এই তারকাকে ছেড়ে দিতেও পিছপা হবে না রিয়াল মাদ্রিদ। আর তা সত্যি হলে বার্সেলোনার টার্গেট নিকো উইলিয়ামসের দিকে নজর দিতে পারে তারা।
এদিকে ভিনিকে পেতে মুখিয়ে রয়েছে সৌদি প্রো লিগ। তাকে দলে পেতে গত দলবদলের মৌসুমেও সৌদি আরব থেকে বিরাট অঙ্কের আর্থিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।
আরও পড়ুন: ভিনিসিউসের জন্য সৌদির ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব ফেরাল রিয়াল
অবশ্য সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভিনিসিউস এও স্পষ্ট করেছিলেন যে, তার এই বক্তব্য কিছু সংখ্যক সমর্থকের উদ্দেশে।
ভিনি বলেন, ‘স্পেনের বেশিরভাগ মানুষই বর্ণবাদী নয়। তবে এমন একটি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা এমন একটি দেশের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করছে। আমি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলতে ভালোবাসি। স্পেনকেও ভালোবাসি আমি। পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য এর চেয়ে ভালো পরিবেশ হয় না।’
‘তবে (আপত্তিকর) বিষয়গুলোর ব্যাপারে দেশটি আরও বিকশিত হতে পারে। ইতোমধ্যে তারা অনেক বিকশিত হয়েছে, কিন্তু উন্নতি করার আরও জায়গা রয়েছে, যেমন: ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে বর্ণবাদী ঘটনা ও বর্ণবাদ কমাতে পারে এবং সেটিই হওয়া উচিত।’