চোটের সঙ্গে লড়াই করতে করতে এবার থেমেই গেলেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার রাফায়েল ভারান। আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলেছিলেন আগেই, এবার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ার থেকেও ছুটি নিয়ে নিলেন ৩১ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে অবসরের ঘোষণা দেন এক যুগের বেশি সময় ধরে রিয়াল মাদ্রিদ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে মাঠে আলো ছড়ানোর পর সম্প্রতি ইতালির ক্লাব কোমোয় যোগ দেওয়া এই ফুটবলার।
তিন মৌসুম খেলার পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে এ বছরের জুলাইয়ে ইতালিতে পাড়ি জমান ভারান। সদ্য সেরি-আয় উঠে আসা সেস্ক ফাব্রিগাসের ক্লাব কোমোয় যোগ দেন তিনি। কিন্তু ক্লাবটির হয়ে প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেই চোটের কবলে পড়েন তিনি।
১১ আগস্ট কোপা ইতালিয়ায় সাম্পদোরিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে মাত্র ২৩ মিনিট খেলেই মাঠ ছাড়তে হয় তার। এরপর থেকে মাঠের বাইরে রয়েছেন ভারান। গতরাতে আতালান্তার মতো বড় দলকে হারিয়ে সেরি-আয় প্রথম ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছে তার দল। অথচ, এই ম্যাচেও তিনি দর্শক হয়ে ছিলেন।
এরপর গতরাতেই জানা যায়, অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন ক্যারিয়ারে অসংখ্য ট্রফি জেতা এই ফুটবলার, আর সকাল হতেই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে এবার ইতালিতে পাড়ি জমালেন ভারান
ইনস্টাগ্রামে ভারান লিখেছেন, ‘(ফুটবল ক্যারিয়ারে) আমি নিজের সর্বোচ্চ মান ধরে রেখেছি। প্রতিবার মাঠে নামলে আমি শক্তভাবেই নামতে চাই, খেলার জন্য জোর করে আমি (ফুটবল) আঁকড়ে থাকতে চাই না। নিজের হৃদয় ও অনুভূতি যা বলছে, তা শোনার জন্য অসামান্য সাহসের প্রয়োজন হয়।’
২০১০ সালে ফরাসি ক্লাব লঁসের জার্সিতে পেশাদার ফুটবলে প্রথম মাঠে নামেন ভারান। সেখানে এক বছর কাটানোর পর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে নিয়ে আসে রিয়াল মাদ্রিদ।
রিয়াল মাদ্রিদের মতো এলিট ক্লাবে পা রাখতেই নিজেকে মেলে ধরা শুরু করেন ভারান। দীর্ঘ ১০ বছর ক্লাবটির জার্সিতে তিনি খেলেছেন ৩৬০ ম্যাচ। এ সময়ে জিতেছেন চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, চারটি ক্লাব বিশ্বকাপ ও তিনটি লা লিগাসহ মোট ১৮টি শিরোপা। এরপর ২০২১ সালে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি পরে খেলেন তিন বছর। অবশ্য ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে কাটানো সময়টা খুব বেশি সাফল্যমণ্ডিত হয়নি এই ফুটবলারের।
২০২৪ সালের এফএ কাপের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে তিনি ইংলিশ ফুটবল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ২-১ গোল জিতে এফএ কাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরার পর কোমোয় যোগ দেন ভারান। বিদায়ী বার্তায় ওই ট্রফিটিরই স্মৃতিচারণ করলেন তিনি।
‘ক্যারিয়ারে আমি অসংখ্যবার পড়েছি, আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। তবে এবার মনে হয়েছে, থেমে যাওয়ার এখনই সময়। ওয়েম্বলিতে শেষ ম্যাচে ট্রফি জয়ের স্মৃতি নিয়ে বুটজোড়া তুলে রাখার এটাই সঠিক সময়।’
ক্যারিয়ারে কোনো অনুশোচনা নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, নিজের খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে গর্ববোধ হয় তার।
‘আমার কোনো অনুশোচনা নেই। আমি কোনো কিছুরই পরিবর্তন চাই না। (ক্যারিয়ারে) এত ট্রফি জিতেছি যা আমি স্বপ্নেও কখনও ভাবিনি। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে নিজের নীতিতে অটল থাকতে পারায় আমি গর্ববোধ করি। যেখানে যা পেয়েছি, আন্তরিকতা দিয়ে তা আরও ভালো করার চেষ্টা করেছি। আশা করি, সবাইকে গর্বিত করতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন: অবসরের বিষয়ে আগে কাউকে কিছু জানাবেন না রোনালদো
ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার ভারানের। ২০১৩ সালে ফ্রান্সের হয়ে অভিষেকের পর ক্রমেই জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৮ সালে জেতেন বিশ্বকাপ। এরপর ২০২০-২১ মৌসুমে ফ্রান্সের উয়েফা নেশন্স লিগজয়ী দলেও ছিলেন তিনি। পরে ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপার কাছে গিয়েও ছোঁয়া হয়নি এই ডিফোন্ডারের।
এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানান। এর সাত মাস না পেরোতেই ফুটবল থেকেই বিদায় নিয়ে নিলেন ভারান।
তবে খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসরে গেলেও এখনই ফুটবল ছাড়ছেন না তিনি। কোমোয় মাঠের বাইরে নতুন ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। তবে সেটা ঠিক কী, তা এখনই স্পষ্ট করেননি ভারান।
এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘মাঠের বাইরে নতুন জীবন শুরু হচ্ছে। কোমোর সঙ্গেই থাকছি, তবে শুধু বুট আর শিন প্যাড পরা হবে না আর। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাব।’
আরও পড়ুন: এবার বিদায় বলে দিলেন নয়ার