তালেবান ক্ষমতা দখল করার পর দেশ ত্যাগে ইচ্ছুক আফগানদের সাময়িক আশ্রয় দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ইউএনবিকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ রকম একটি অনুরোধ পেয়েছি। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি কিন্তু অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোন পর্যায় অনুরোধ এসেছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা ওয়াশিংটন এবং ঢাকা উভয় কূটনৈতিক মাধ্যমে এসেছে।

ড. মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে যে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

অনুরোধটি পাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়েই আমরা অনেক সমস্যায় আছি, আমাদেরকে আর সমস্যায় ফেলবেন না।’ 

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে এমন প্রস্তাব পাঠায় যা পরে ঢাকায় পৌঁছে দেয়া হয়।

ড. মোমেন বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে অস্থায়ী আশ্রয় দেয়ার জন্য আমেরিকা কোন কোন দেশকে অনুরোধ করেছে এবং কতগুলো লোক এবং কতদিন রাখবে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।’

এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে সে দেশের জনগণ সমর্থন দিলে বাংলাদেশও মেনে নেবে।

সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জনতার সরকারে বিশ্বাস করি। আমরা সেই সরকারকে বিশ্বাস করি জনগণ যাকে পছন্দ করে। আমরা গণতান্ত্রিক সরকারে বিশ্বাসী। যদি তালেবান সরকার তার জনগণের সমর্থিত সরকার হয় তাহলে বাংলাদেশের দরজা অবশ্যই খোলা থাকবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সব দেশের প্রতি বন্ধুত্বে বিশ্বাস করে এবং যদি কোনো সরকার বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় তাহলে বাংলাদেশ সমর্থন দেবে।

তিনি বলেন, আফগানিস্তান বাংলাদেশের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ, সার্কের সদস্য রাষ্ট্র। বাংলাদেশ আফগানিস্তানের উন্নয়ন দেখতে চায়।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ‘জনগণের সরকার হলে’ বাংলাদেশ স্বাগত জানাবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এদিকে, সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি বাংলাদেশ সাবধানতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে।

এতে বলা হয় ‘আমরা আফগানিস্তানের সকল স্টেকহোল্ডারসহ বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’

 

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ চালিয়ে যেতে পেরে খুশি হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়ে, ‘প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নীতি বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানের সাথে কাজ করতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা টেকসই উন্নয়নে এই অঞ্চলকে একসঙ্গে  সমৃদ্ধ করবে।’

বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে, একটি গণতান্ত্রিক এবং বহুত্ববাদী আফগানিস্তান তার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র নিশ্চয়তা।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

মন্ত্রণালয় বলছে, ‘আমরা মৌলিক শিক্ষা, কমিউনিটি স্বাস্থ্যসেবা, স্যানিটেশন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আইসিটি সক্ষম পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সাথে আমাদের সেরা অনুশীলন ভাগ করে নেয়ার জন্য প্রস্তুত।’

এতে বলা হয়, বাংলাদেশি এনজিওগুলো গত ২০ বছর ধরে আফগানিস্তানে সফলভাবে কাজ করছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে আফগানিস্তানের জনগণের ওপর তাদের দেশ পুনর্গঠন করা এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নিজেরাই নির্ধারণ করবে।