পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় বুধবার চট্টগ্রাম, বগুড়া ও চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে চারজনসহ আটজন নিহত হয়েছেন।
বগুড়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় পাঁচজন মারা যান। তাদের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে চারজন এবং প্রতিপক্ষের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে আরেকজন মারা যান।
নিহতদের মধ্যে গাবতলী উপজেলার বালিয়াদিঘী ইউনিয়নের কালাইহাটা গ্রামের খোকনের স্ত্রী ও ইউপি সদস্য প্রার্থী কুলসুম আক্তার, একই গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে আলমগীর হোসেন, ইফাত উল্লাহর দুই ছেলে আব্দুর রশিদ ও আদুর রাজ্জাক পুলিশের গুলিতে মারা যান।
জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, নির্বাচনের ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ে পুলিশ-বিজিবি সদস্য ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা চালায় এবং সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা: চট্টগ্রামে নিহত ১
এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এ ঘটনায় চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এছাড়া বগুড়ার গাবতলী উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে স্বতন্ত্র সদস্য প্রার্থী সাইদুল ইসলামের সমর্থক জাকির হোসেন (৩৬) নামে আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে রামেশ্বরপুরের জয়গুলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইদুল ইসলাম ও আরেক প্রার্থী ফেরদৌস হোসেন মিঠুর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে জাকির গুরুতর আহত হয়।
পরে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা: শৈলকুপায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া রফিকুল ইসলাম জানান, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
চাঁদপুরের কচুয়া ও হাইমচর উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে পৃথক সহিংসতার ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ রায় জানান, কচুয়া উপজেলার সাচার ইউনিয়নে হাতিরবাঁধ কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের সময় শরীফ হোসেন (১৮) নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান মোল্লা জানান, হাইমচর উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ঈশানবালায় অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আ.লীগ নেতা নিহত
পঞ্চম ধাপে চাঁদপুরের ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৬২ জন এবং সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে এক হাজার ৪১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাটোরী ইউনিয়নে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন।
নিহত ওঙ্কার দত্ত (৩২) সিংহরা দত্ত বাড়ির নেপাল দত্তের ছেলে এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের টিউবওয়েল প্রতীকের সদস্য প্রার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাসের সমর্থক।
পুলিশ জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে চাতরী ইউনিয়নের সিংহরা এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজিম উদ্দিন ও আরেক প্রার্থী ধনঞ্জয় বিশ্বাসের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিদারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এদিকে বোয়ালখালী উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের শিকদারপাড়ায় বুধবার ভোরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ইউপি নির্বাচন: ঝিনাইদহে সংঘর্ষে আহত ৭, আটক ৫
আহত আব্দুল্লাহ আল হারুন রিপন (৩২) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল করিম।