জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বাংলাদেশের মতো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কথা ‘শুনতে’ হবে এবং সবার জন্য সুস্থ পরিবেশের মানবাধিকারকে বাস্তবায়নের জন্য সম্ভাব্য সব উপায় কাজে লাগাতে হবে।
বুধবার বাংলাদেশে চার দিনের সফর শেষ করার কয়েক ঘন্টা আগে ব্যাচেলেট এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এখন কাজের সময়, আমরা অনেক কথাই বলেছি এবং এখন আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
এসময় তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কথা শোনার এবং ‘ঐক্য, সংকল্প ও সংহতি’ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্যাচেলেট বলেন, তারা জানেন যে তাদের কী করতে হবে।
তিনি আশা করেন, কেবল বন্ধ ঘরে আলোচনা না করে চলতি বছরের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ২০২০-পরবর্তী জীববৈচিত্র্য কাঠামোর আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং আমি যেমন বলেছি, আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে। এ বিষয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে নির্বাচনকালে সুশীল সমাজের আরও স্পেস প্রয়োজন: ব্যাচেলেট
বিআইআইএসএস মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) আয়োজিত ‘নিউ ফ্রন্টিয়ার্স অব হিউম্যান রাইটস: ক্লাইমেট জাস্টিস ইন পারস্পেক্টিভ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান বলেন, ‘সুতরাং আমাদের একটি নতুন পথ আঁকতে হবে। ’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়ানক হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশেগুলোর সারিতে প্রথম দিকে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক অনুমান করে যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসীতে পরিণত হতে পারে। যা বাংলাদেশের সমগ্র জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ বা চিলির সমগ্র জনসংখ্যার সমান।
আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ততদিনে তার প্রায় ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাতে পারে এবং এর অর্থ কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ১৮ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
ব্যাচেলেট বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্যের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও তাপের প্রভাবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের কিছু অংশে ধান উৎপাদন প্রভাবিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দারিদ্র্য ও শিক্ষা বিষয়ে এসডিজি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে। ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের উচ্চাভিলাষী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য এবং ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত দেশের’ মর্যাদা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য আমি বাংলাদেশের প্রশংসা করি।’
ব্যাচেলেট একই সময়ে বলেন, লিঙ্গ সমতার এসডিজি ৫ এবং বৈষম্য হ্রাসে এসডিজি ১০ পূরণের জন্য শক্তিশালী প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে- বাল্যবিয়ে দূর করার জন্য কাজ করা, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা করা, প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা এবং আয় বৈষম্য কমাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।
এছাড়াও ব্যাচেলেট বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টা এসডিজি ১৬-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রচার, সবার জন্য ন্যায়বিচারের সুবিধা প্রদান এবং কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করা, জনসাধারণের মতপ্রকাশের জন্য নাগরিক স্থান সম্প্রসারণ (অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই) এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবেন না, সহযোগিতা বাড়ান: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি ব্যাচেলেট