তিনি বলেন, ‘টিকা ছাড়া কোনো রোগই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। হাম-পোলিওর মতো রোগগুলো দূরীকরণেও আমাদেরকে টিকা নিতে হয়েছে। করোনাভাইরাস দূর করতেও আমাদেরকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।’
রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব এনটিডি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেককেই কোনো না কোনো সময়ে টিকা নিতে হয়েছে। আর টিকা নিলে জ্বর-সর্দি, ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক।’
মন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসক নেতাসহ সবাইকে টিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে সবাইকে সচেতন করতে স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সবাই টিকা নিলেই দেশ করোনামুক্ত হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা নিতে সবাইকে নিবন্ধন করতে হবে। যারা অনলাইনে আবেদন করতে অপারগ, তাদের গ্রাম পর্যায়ে তথ্য কেন্দ্রে সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়াও টিকা কেন্দ্রে গিয়ে ফর্ম ফূরণ করা যাবে।
আরও পড়ুন: টিকা নিলে ভয় নেই, বরং না নিলেই ভয়: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু ৭ ফেব্রুয়ারি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলেই এর আগে পৃথিবী থেকে পোলিও, প্লেগসহ অন্যান্য মহামারিগুলো বিদায় নিয়েছে। অথচ ভ্যাকসিন প্রয়োগে দেশে এখন কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই বিভ্রান্তির ফলে শুরুতে মানুষের মনে ভয়ের শঙ্কা থাকলেও এখন ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে। কারণ, ভ্যাকসিনের প্রথম দু ’দিন প্রয়োগের ফলে দেখা যাচ্ছে, এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কারো শরীরে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
‘সরকার আগে থেকেই বলেছে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। তবে, ব্যাপক মানুষের শরীরে প্রয়োগের পরে দুই একজনের দেহে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতেও পারে। কারণ, পৃথিবীর সকল ভ্যাকসিনই এরকম স্বল্পমাত্রায় মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কোনোভাবেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে মানুষকে বিরত থাকতে উৎসাহ দেয়া যাবে না। এতে করোনাভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত করতে আরও বেশি সময় লাগবে,’ বলেন তিনি।
আজকের দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে বর্তমানে ১৭০ কোটি মানুষ এনটিডিতে আক্রান্ত। বিশ্বে ২০টি রোগকে এনটিডি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ১৩টি রোগকে দেশ থেকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। অবশিষ্ট ৭টির মধ্যে জলাতঙ্ক, কালাজ্বর ও কুষ্টরোগ দেশ থেকে বিদায়ের পথে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশে বর্তমানে সর্প দংশনে বছরে প্রায় ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং বছরে প্রায় ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এটিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অধিক আক্রান্ত স্থানে বেশি করে অ্যান্টিভেনম প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করা যায়, ২০২৩ সালের মধ্যেই বাকি রোগগুলো থেকেও দেশ মুক্ত হতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন: টিকা নিয়ে গুজব ছড়ানো, রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকুন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কোভিড টিকার কোনো অভাব হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনা: ঢাকার ৫ হাসপাতালে টিকা নিলেন আরও ৫৪১ জন
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে করোনাভ্যাকসিন দেয়া হবে। সরকারের টাকায় কেনা একটি ভ্যাকসিন যেন অপচয় বা নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘এই করোনা মহামারিতেও এনটিডি রোধে সরকার যে ভূমিকা রেখে চলেছে এতে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই অন্তত ২টি এনটিডি রোগকে দেশ থেকে নির্মূল করা সম্ভব হবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।