তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দেশে অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।’
জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান এবং সরকারি দলের কাজিম উদ্দীনের পৃথক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আহসানুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারির প্রথম থেকেই সরকার সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
আরও পড়ুন: কোভিড: সাড়ে ৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন দৈনিক মৃত্যু দেখল দেশ
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘যার ফলে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুর হার এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।’
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকা পড়া ও চাকুরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোভিডকালে চাকুরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুতদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতনভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।’
সংসদ নেতা বলেন, অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়াল্ড ইকোনোমিক লিগ টেবিল ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি।
আরও পড়ুন: আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
দীর্ঘ সময় ধরে আ’লীগ ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়ন গতি পেয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
এই প্রতিবেদনে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে সক্ষম হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার ফলে দেশে করোনাভাইরাসসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি বলেন, তিন কোটি কোভিড-১৯ টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে এবং খুব শিগগিরই এই টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে ৬৬ হাজার পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে।
পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজ তারাই ব্যর্থ: প্রধানমন্ত্রী
নাগরিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করব: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গার এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তহবিল পরিচালনার জন্য ডেল্টা তহবিল গঠন এবং নীতি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের তেল নির্ভর দেশগুলোতে কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কোভিড-১৯ মাহামারির আগের সময়ের মতো হয়ত থাকবে না।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিকল্প শ্রমবাজারে প্রেরণে সরকার কাজ করছে।
তিনি বলেন, দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে নতুন শ্রমবাজার খোঁজা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে সাময়িকভাবে শ্রমিক পাঠানো সম্ভব না হলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়েছে।
বিকল্প শ্রমবাজার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবরে ৫০ জন বাংলাদেশি রোমানিয়ায় কর্মী ভিসা পেয়েছে এবং আরও ২৬০ জন ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে রোমানিয়া সরকারের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বরে প্রথমবারের মতো ২৪০ জন দক্ষ কর্মী উজবেকিস্তানে প্রেরণ করা হয়েছে যারা দেশটির কারশিতে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির অধীনে একটি প্রকল্পে রয়েছেন।
এছাড়া আরও ৬৪০ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে উজবেকিস্তানে প্রেরণ করা হবে।
আফ্রিকার সুদান, দক্ষিণ সুদান, উগান্ডা, জাম্বিয়া, তানজানিয়া এবং লিবিয়ায় বাংলাদেশের জন্য নতুন শ্রমবাজারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।