দক্ষিণ কোরিয়াকে বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়ন ও বিনিয়োগ অংশীদার হিসেবে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোরিয়া এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক ইয়ুন-এর চেয়ারম্যান ও সিইও হি সাং বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদ ভবনে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সরওয়ার-ই-আলম সরকার সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা কোরিয়া সরকারের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কোরিয়া সরকারের সহযোগিতার পরিমাণ বিগত পাঁচ বছরে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর যৌথ রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণে অর্থায়নের চুক্তি সইয়ের জন্য ইউনকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, 'এই সেতু নিশ্চয়ই চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাবে এবং দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য মাতারবাড়ি (সোনাদিয়া) গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য একটি প্রশস্ত করিডোর তৈরি করবে।’
তিনি বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পে সহজ শর্তে অর্থায়নের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী তার দু'বার কোরিয়া সফরের কথাও স্মরণ করেন।
২০১০ সালের সফরটি তিনি আন্তরিকভাবে স্মরণ করেন। তিনি সেসময় কোরিযা প্রজাতন্ত্রকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি 'বিশেষ বন্ধু' বলে অভিহিত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: পরিবেশের স্বার্থে রাসেলস ভাইপার সাপ না মারার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও হি সাং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ঢাকায় তার সফল সফরে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি তার এই সফরকে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হিসেবে বিবেচনা করেন কারণ তিনি বাংলাদেশের চলমান প্রধান উন্নয়ন যাত্রা প্রত্যক্ষ করেন।
কোরিয়ান এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সিইও বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জিডিপি, চলমান উন্নয়ন পরিক্রমা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মহামারিসহ চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে।
তিনি দারিদ্র্য বিমোচন এবং ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে সম্পূর্ণরূপে উত্তরণে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
ইয়ুন বাংলাদেশে কোরিয়ার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং উভয় দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে কারিকুলামে আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞান আনা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদল ইডিসিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) এবং ইডিপিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফান্ড)’র আওতায় ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচিতে বাংলাদেশকে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তারা বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা ও অর্থায়নের বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ইয়ুন এই সহযোগিতার পারস্পরিক সুবিধার কথা তুলে ধরে বলেন, মানব মূলধন হিসেবে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যুবক রয়েছে। অন্যদিকে কোরিয়ান প্রজাতন্ত্র তার ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, উভয় দেশ এই চ্যালেঞ্জটি কাটিয়ে উঠতে একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। যেটি সর্বোপরি উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করে। এই সহযোগিতার সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে শ্রোতাদের মধ্যে ইতিবাচকতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
ইয়ুন বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন ও জোরদারে তার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন। যে প্রস্তাবটি শেখ হাসিনা উষ্ণভাবে গ্রহণ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে তার সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন।
তিনি দু'দেশের জনগণের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক সম্প্রসারণ ও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব বলেন, উভয় পক্ষ পারস্পরিক সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বৈঠক শেষ করেন।
অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং ইআরডি সচিব মো.শাহরিয়ার কাদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩১৫ কোটি টাকার চেক গ্রহণ করলেন প্রধানমন্ত্রী