গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে অবিলম্বে এই দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সোমবার ক্যাব’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিআরটিসির কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সাথে এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ মন্ত্রীর ঘোষণার পরও বিষয়টি পুরোপুরি বাস্তায়ন হয়নি।
আরও পড়ুন: কেনাকাটায় সতর্ক না হলে পরিবারের জন্য মৃত্যু কিনে আনার মতো হবে : ক্যাব
অন্যদিকে, ২০১৮ সালে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টিকারী নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির অন্যতম দাবি ছিল, ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সে সময়ই প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় একটি খসড়া গণপরিবহন আইন অনুমোদন করলেও, সেখানে হাফ ভাড়ার বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি চরম অবমাননা করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনার জন্য দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার গণপরিবহন আইন সংশোধনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ হয়নি।
অন্যদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে সরকার গণপরিবহন ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করলেও গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় না করে নিজেদের ইচ্ছামতো দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে গণপরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। এছাড়া ভাড়া নির্ধারণের সময় গড় ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন দেখিয়ে ভাড়া আদায় দেখালেও কার্যত দ্বিগুণ যাত্রী পরিবহনের ঘটনা যেন স্বাভাবিক। ভাড়া নির্ধারণে অতিরিক্ত অযৌক্তিক ব্যয় ও মাইলেজ এর বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখিয়ে একচেটিয়া ভাড়া নির্ধারণ প্রক্রিয়াটিও ত্রুটিপুর্ণ বলে মন্তব্য করে, গণপরিবহন মালিকদের স্বার্থে এই প্রক্রিয়াটি রহিত করা উচিত।
আরও পড়ুন: পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দাবি ক্যাবের
বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে অধিকাংশ সময় গণপরিবহন শ্রমিকদের হাফ পাস বা হাফ ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা চলছেই। অথচ গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা মুখে মুখে বুলি আওড়ায়, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম অনুসারেই ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্রের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। এছাড়া ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নগরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো অর্ধেক ভাড়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে চলেছে পুরো বর্ধিত ভাড়াও। এ যেন রীতিমতো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে আর্বিভূত হয়েছে। একই সাথে দরিদ্র, অস্বচ্ছল ও শিক্ষার্থীদের জন্য গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল মুক্তিসংগ্রামে দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণদের ভূমিকা অনন্য। দেশে চলমান ভোগ্যপণ্য ও সেবার ক্রমবর্ধমানে ঊর্ধ্বমুখী দামে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন হুমকিতে। গণপরিবহনে বর্ধিত ভাড়া দিয়েই শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে অনেক পরিবারের পক্ষে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: নিত্যপণ্যের দামে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না: ক্যাব