বাগেরহাটের মোল্লাহাটে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রবাসীর স্ত্রীকে জুতার মালা পরিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এরপর ওই নির্যাতনের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার চৌধুরী এবং কয়েকজন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন ওই নারী।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের এক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার রাতে ওই গৃহবধূর ওপর নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর প্রশাসনের টনক নড়ে।
অভিযুক্ত কাওসার চৌধুরী চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য বলে জানা গেছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই নারীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে পিটানো হচ্ছে। লোকলজ্জার ভয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়া ওই নারী বাড়ি ছেড়ে অনেকটা আত্নগোপনে আছেন। নির্যাতনের শিকার নারী দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে থানা পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারী এ ঘটনা নিয়ে এখন মীমাংসা করতে চান।
আরও পড়ুন: নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: ওসিসহ ৫ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, গলায় জুতার মালা পরানো ওই গৃহবধূকে একজন কঞ্চি দিয়ে পিটাচ্ছেন। আর একজন ওই নারীকে ঘুরাচ্ছেন। পাশে উৎসুক জনতা দাঁড়িয়ে দেখছে। কঞ্চি দিয়ে পিটানো ব্যক্তি স্থানীয় ইউপি সদস্য কাওসার বলে চিহ্ণিত করেছেন ওই নারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, প্রায় ৩০ বছর বয়সী ওই গৃহবধূর স্বামী প্রবাসী। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ওই গৃহবধূ স্বামীর বাড়িতে বসবাস করেন। মঙ্গলবার সকালে ইউপি সদস্য কাওসার চৌধুরী তার লোকজন নিয়ে ওই বাড়িতে যান এবং গৃহবধূকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। এরপর মেয়ের শ্বশুরের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ তুলে তাদের পায়ের স্যান্ডেল রশি দিয়ে বেঁধে মালা তৈরি করে গলায় পরিয়ে দেন। এরপর ইউপি সদস্য ওই গৃহবধূকে পিটাতে থাকেন।
ওই নারীর অভিযোগ, ইউপি সদস্য কাওসার চৌধুরী এবং আশপাশের কয়েকজন প্রতিবেশী আমাকে ধরে বাড়ির সিঁড়ির কাছে নিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে কঞ্চি দিয়ে পিটিয়েছে। এসময় তারা গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল এবং হাতে থাকা ৯৫ হাজার টাকা মুল্যের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার ওপর ওই নির্যাতন চালানো হয়। তারা নির্যাতনের ওই ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে তার মানসম্মান ক্ষুন্ন করেছে। এ ঘটনার সুষ্ট বিচারের দাবি জানান ওই নারী।
আরও পড়ুন: স্ত্রী নির্যাতন মামলা: চট্টগ্রামে সার্জেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য কাওসার চৌধুরীর দাবি, ওই নারীর বেয়াই অনেক দিন ধরে তার বাড়িতে আসে। স্থানীয় লোকজন দুইজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে তাকে খবর দেয়। ছোটরা ওই গৃহবধূকে জুতার মালা পরিয়েছে। তবে সে কঞ্চি দিয়ে দুটি বারি দেয়ার কথা স্বীকার করেছে।
মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদ হোসেন জানান, ওই নারীকে জুতার মালা পরিয়ে পেটানো হচ্ছে এমন ভিডিওচিত্র ফেসবুকে সে দেখেছে। এরপর উপজেলা সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) অনিন্দ্য মণ্ডল এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুনিয়া আক্তারকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তারা ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে তার দেখা পাননি। গৃহবধূর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তা ফৌজদারি অপরাধ। থানা পুলিশকে ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও জানান, ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোমেন দাশ জানান, ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরার পর থানা পুলিশ ওই নারীকে খুঁজতে থাকে। বৃহস্পতিবার ওই নারীকে খুঁজে পাওয়া গেছে। দুপুরে সে থানায় এসে লিখিত দিয়েছে যে, বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা করে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে এই মুহুর্তে সে মামলা করতে চায়না। ওই নারী লিখিত অভিযোগ দিলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওসি জানান।
আরও পড়ুন: ডিমলায় গৃহবধূকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ