নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণচেষ্টায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদ চৌধুরীসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ করে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
বেগমগঞ্জ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছাড়া অন্যরা হলেন-উপপরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মফিজুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন সোহাগ ও চৌকিদার আলী আসগর।
ঘটনাটি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, অনীক আর হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, তৎকালীন ওসি, একজন এসআই ও এএসআইকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং চৌকিদারকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে এলজিআরডি সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত বছরের ৫ অক্টোবর ঘটনাটি আদালতের নজরে আনার পর ফুটেজ সরাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সিডি বা পেনড্রাইভে কপি রেখে ভিডিও ফুটেজ সরাতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এ নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া ওই নারীর পরিবারকে সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য নিতে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন আদালত। কমিটিকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
পরে আদালতের নির্দেশে কমিটির প্রধান ছিলেন চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাশার। সদস্য ছিলেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসরাত সাদমীন এবং জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।
আদালতে ওই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে অবহেলা পাওয়ায় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় চৌকিদারের বিষয়ে আদালত যৌক্তিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিতে পারে বলে মত দেয়া হয়। এরপর সেই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিলেন হাইকোর্ট।
গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে ৩৭ বছরের নারীকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর এলাকার দেলোয়ার বাহিনীর সদস্যরা। তারা ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। পরে ওই নারীকে হামলাকারীরা কুপ্রস্তাব দেন। তিনি তাতে রাজি না হওয়ায় তারা ধারণ করা ভিডিওচিত্র ৪ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করলে তা ভাইরাল হয়। এতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
আরও পড়ুন: বাগেরহাটে প্রাইভেটকার চাপায় নারী নিহত