আগামী জুন মাস থেকে আবারও এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য পণ্য সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু দরিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষদের সাশ্রয়ের চিন্তা করছি। যতোদিন প্রয়োজন হবে এবং দেশে এরকম দাম থাকবে, এই এককোটি পরিবারের পাঁচ কোটি মানুষকে এভাবে সাহায্য করা হবে।
সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভোজ্য তেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জুন মাস থেকে এক কোটি পরিবারকে আবার সহায়তা দেয়া হবে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এক কোটি পরিবারকে এখন যেভাবে সহায়তা দিচ্ছি সেভাবে দিয়ে যাবো। আমাদের দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ২০ লাখ দারিদ্রসীমার নিচে। সেখানে আমরা এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়মূল্যে খাদ্ পণ্য দেবো। এক কোটি পরিবার মানে পাঁচ কোটি লোক। আমরা কিন্তু দরিদ্রসীমার নিচে মানুষদের সাশ্রয়ের চিন্তা করছি।
আরও পড়ুন: দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা: বাণিজ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, আমি ৫০ লাখ পরিবারের কথা বলে ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যতো কষ্ট হোক এক কোটি মানুষকে দুইবার দেয়া হয়েছে। আবার দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন রমজান মাসের পড়ে। একই সঙ্গে বলেছেন এটা বন্ধ করা যাবে না। যতোদিন প্রয়োজন হবে এবং দেশে এরকম দাম থাকবে এই এককোটি পরিবারের পাঁচ কোটি মানুষকে তোমাদের এভাবে সাহায্য করতে হবে। আমাদের তরফ থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার দাম আমরা কমাতে পারবো না। দেশের বাজারে দাম কম রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো সেটার গ্যারান্টি দিতে পারবো।
টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্য দামে পণ্য দিবেন, সেখানে কি তেলের দাম সমন্বয় করবেন নাকি আগের দামেই বিক্রি করা হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে অনেক ঘাটতি হচ্ছে, অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যদি আপনারা বলেন ১০ টাকা বাড়ানো উচিৎ বা এটা ন্যায্য হয়েছে তাহলে আমরা বাড়িয়ে দেবো। সব কিছু মিলে আমরা এখনও ফাইনাল করিনি।
মন্ত্রী বলেন, বাজারে যখন ২০০ টাকা তেল হয়ে যায় তখন অনেক পার্থক্য থাকে। তখন টিসিবির ট্রাকের পিছনে একই লোক ঘুরে ফিরে আসে। লাইন ধরে যারা কেনে তারা দুই-তিনবার করে কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নেইনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি। কোথায় কোথায় বেশি লাভের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। গত এক দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। আজকে বাজারে যে তেল ছেড়েছে সেটা দুই মাস আগে বন্দর ছেড়েছে।
তিনি বলেন, তেলের দাম বেড়েছে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা সত্য। কিন্তু আরও একটা সত্য আছে সেটা হলো আমরা আমাদের দেশে তেল উৎপাদন করি না। মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ তেল আমাদের সার্বিকভাবে হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ তেল আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই মেসেজ আন্তর্জাতিক বাজার ও আশেপাশের দেশগুলো বাজারসহ পারিপার্শ্বিক কিছু বিবেচনা করে যতটুকু কম রাখা যায় আমরা সেটা চেষ্টা করবো।
টিপু মুনশি বলেন, এখন যে তেল কিনছি ১৯৮ টাকায় সে তেল এলসি করা হয়েছিল অন্তত ৪৫ দিন আগে। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কত ছিল- জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কে কত দামে খুলেছে (এলসি) সেটার চেয়ে বড় কথা যে মাসটা ঠিক করি আমরা, সে মাসে তারা কত দামে ক্লিয়ার করল। সবগুলো এলসি কত দামে তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ক্লিয়ার করল, সেটা ধরে করেছি। এটা যে আজকে ২৫০ টাকা হচ্ছে, সেটা ধরে হচ্ছে না। কত আগে খুলেছে সেটা মূল বিষয় নয়। কি দামে চট্টগ্রাম বন্দরে সব ক্লিয়ার হলো, সেটার গড় করে নির্ধারণ করা হয়। গতকাল (রবিবার) দাম ছিল এক হাজার ৯৫০ ডলার (প্রতি টন)। আমাদের নির্ধারণ করার সময় ছিল এক হাজার ৭৫০ ডলার। তাই ৪০ বা ৪৫ দিন ফ্যাক্টর না।
আরও পড়ুন: ভোজ্যতেল নিয়ে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন: বাণিজ্যমন্ত্রী