জ্বালানি তেল ডিজেল, পেট্রল ও অকটেনের মূল্যবৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে তেলের দাম বৃদ্ধি করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে। জ্বালানি সচিব, জ্বালানি মন্ত্রাণলয়ের উপসচিব ও বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের) চেয়ারম্যানকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আগামীকাল বুধবার রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
আইনজীবী ইউনুল আলী আকন্দ জানান, আইন অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করবে বিইআরসি। কিন্তু সেটা না করে একটা গেজেট জারির মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। দাম বৃদ্ধির গেজেটে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত জারি করা হলো। কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে জ্বলানি তেলের দাম বৃদ্ধিও এখতিয়ার দেয়া হয়নি। আইনের লঙ্ঘন করে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় হাইকোর্টে রিট করেছি।
গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর পরই জনমনে দেখা দেয় চরম ক্ষোভ। পেট্রল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সংগ্রহের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য (১ লিটার) ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা এবং পেট্রল ১৩০ টাকা হবে। এতদিন কেরোসিন ও ডিজেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা এবং পেট্রল ৮৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পরে গত ৬ আগস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। শনিবার ৬ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার শঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এরপর ৭ আগস্ট যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।
জ্বালানি তেলে মূল্যবৃদ্ধির পর ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৮ এর ৩৪ (২) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী মিনিবাস এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ০৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৪০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে ১০ টাকা ও ৮ টাকা নির্ধারিত হলো।
পড়ুন: পশ্চিমারা আমাদের বিপদে ফেলেছে: প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: গণপরিবহন বন্ধে দেশজুড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগ